Thursday 20 December 2018

এবার আসি?

এবার আসি?
সকলকে নিয়ে খুব ভালো কাটালাম সময়টা তবে এবার আমায় যেতে হবে........
যীশু পুজো শেষ করে, কেক পেস্ট্রি প্রসাদ খেয়ে, ৩১ ডিসেম্বর বেরোবো। ..
সবাই ভালো থেকো।.
নতুন বছর ভালো কাটুক।
ইতি,
২০১৮
p .s : চিন্তার কোনো কারণ নেই, নতুন বছরে সব পুজো পার্বন আবার শুরু হয়ে যাবে immediately !!!
খাওয়া দাওয়া আনন্দ হিজিবিজি  চলুক।
প্ল্যানিং শুরু কিয়া জায়ে !!!!



সারা বছর নানা পুজোয় থাকিস তোরা মেতে,
বারো মাসের একটাও মাস দিসনা খালি যেতে!

পেটুক তোরা, সারাবছর কেবল খাওয়া দাওয়া,
পয়সা ভরিস প্রতিমাসে, তবু হয়না জিম যাওয়া!

জানুয়ারিতে পিঠে পুজো, পাটিসাপ্টা পুলি,
নতুন গুড়ের সুগন্ধে যাস, সব বেদনা ভুলি!

ফেব্রূয়ারিতে সরস্বতি, সাজিয়ে কুলের ডালা,
মটরশুঁটি ফুলকপিতে ভরা ভোগের থালা !

হোলিপুজো মার্চ মাসে, রং মাখিয়ে মজা,
বাড়ি বাড়ি খেয়ে বেড়াস মালপোয়া আর গজা!

এপ্রিলে হয় বছরপুজো, আনন্দ নাচ গান,
রুই মাছের কালিয়া খেয়ে জুড়োয় তোদের প্রাণ!

মে জুনে ঈদ-পুজো আর ঘুড়বে রথের চাকা, 
বিরিয়ানী সাপ্টে খাবি, প্লেট করবি ফাঁকা !

আসুক না ছাই জুলাই মাসে বর্ষামুখর রাত,
জামাইপুজোয় আম ইলিশে বাজার হবে মাত!

অগাস্ট থেকে অক্টোবর, নানা পুজোর সারি ,
চড়চড়িয়ে ক্যালোরি বাড়ে, বয়ে  গেলো ভারী ! 

দুর্গাপুজোয় ভোগ-লাবড়া, কালিতে পাঁঠার ঝোল,
শনিবারের পুজোয় আছে বাতাসা হরি বোল !

নভেম্বরে ভাইপুজো, পাতে ফুলকো লুচি,
ভেসে বেড়ায় ছোলার ডালে ভাজা নারকোল কুচি!

ডিসেম্বরে যীশুপুজো, সাজিয়ে কত আলো,
কেক পেস্ট্রি প্রসাদ পাতে, খেতে বড়ই ভালো!

এরওপরেও  বিয়েবাড়ি, পৈতে, মুখেভাত,
আছে অম্বল,পেট ঢিসঢিস কিংবা হাঁটুর বাত!

সে যাগ্গে .....
কিন্তু New Year Resolution?????

 জমিয়ে খাবো, বাসব ভালো, বাঁচবো এমন আজ,
একটা জীবন, গর্ব হবে, করবো এমন কাজ !

Monday 5 November 2018

ভূত কয় প্রকার?

Photo credits: received on Whatsapp.Thanks.

দুনিয়াটা চারিপাশে  
দেখে  হই ক্লান্ত!
ব্যবহারে ভূত ভাবি , 
ওমা, এ যে জ্যান্ত!

গেছো ভূত গাছে বসে
মজাসে দোলায় ঠ্যাং,
মেছো ভূত মুড়ো খায়,
ডিনারে তন্দুরি-ব্যাঙ!

পিটপিট করে চোখ
নাম নাকি কানাভুলো,
বলে এক, করে এক
সাথে কালো মোটা হুলো !

মামদোটা ভারী পাজি,
কুবুদ্ধি মাথা ভরা,
পেত্নীর চুল টেনে
লুকোয়, দেয়না ধরা!

রাক্ষস খোক্কস
করে শুধু মারামারি,
প্রকৃতির জল মাটি
তাই নিয়ে কাড়াকাড়ি!

যে ভূত কন্ধকাটা,
তার নাকি নেই গলা,
তবু হাতে মাইক পেলে
বাজে কথা চাই বলা !

মহিলারা কম নয়,
আছে শাঁকচুন্নি,
চুলোচুলি বদনাম
ভূতেদের "মুন্নি"!!

ডাইনির ছেলেমেয়ে
হলোনা যোগ্য ভূত,
এই ভেবে সারাদিন
মন তার খুঁতখুঁত!

হাঁউমাঁউখাঁউ করি 
ভয় নেই এক রত্তি?
ভূতজন্ম বৃথা মোর 
ভাবে ব্রহ্মদত্তি!

ঘেঁটো ভূত, পেটো ভূত
কিম্ভুত কিমাকার,
#MeToo যতই লেখো
বয়ে গেলো ভারী তার!

সাদা ভূত কালো ভূত,
অদ্ভুত বিদঘুটে,
লোভী তারা একসাথে
খাচ্ছে যে লুটে পুটে  !

বেঁটে ভূত, মোটা ভূত
আছে তারা ছড়িয়ে,
চারিদিকে কত ভূত
system জড়িয়ে !

দুনিয়াটা চারিপাশে  
দেখে হই দিশেহারা,
এরা যদি ভূত নয় ,
তবে বলো এরা কারা ?

ভূতকে পেও না ভয় 
বরং দাড়াও রুখে,
এরা সব আমি তুমি ,
ভূতের মুখোশ মুখে!

Tuesday 30 October 2018

কুমড়ো পুজো : বাংলায় যাকে বলে Halloween


সবজিটা আমার কোনোদিনই ভালো লাগতো না । যেমন বাজে গন্ধ তেমনি বাজে খেতে। তবে সেটা এতো জোর গলায় সারা বিশ্বকে জানিয়ে বলার সাহস ছিল না । বিশ্ব তো ভুলে যাও, বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে বলার ও তেমন সুযোগ ছিল না। কড়া নিয়ম ছিল থালায় যা দেওয়া হবে সব খেয়ে নিতে হবে, ব্যাস।  ফুলস্টপ! no discussion.
নইলে সেই বড় বড় চোখ, ভাবলে আজও হাঁটু কাঁপে,গলা শুকিয়ে আসে !
ফলে সারা জীবন সুড়সুড় করে কুমড়ো খেয়ে নিয়েছি। চুপচাপ ।
কুমড়োর ছেঁচকি, কুমড়োর ছক্কা, কুমড়ো ভাতে, কুমড়োর চাটনি!
কি সব গ্ল্যামারহীন রেসিপি।
তাই খেয়েছি, নির্বিবাদে।বছরের পর বছর ।

তবে আজ বলতে দ্বিধা নেই এইসব অত্যন্ত বাজে শাক সবজির মর্ম বুঝেছি বাড়ি ছাড়ার পরে ।
বেনারস এর হোস্টেলে যখন নেনুয়ার ঝোল আর ভাত খেতে দিতো তখন মনে হতো, আহা মা কুমড়ো ছেঁচকিটা বড় ভালো বানায় !
জাপানের কলেজ ক্যান্টিনে যখন সামুদ্রিক শ্যাওলা মুড়ে একটা চিকেন দিতো (আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে, শ্যাওলা নয়, seaweed !), তখন ওই কুমড়ো ছক্কার জন্য মন কেঁদে উঠতো!
হল্যান্ড এ ছোট্টবাচ্চা নিয়ে হিমশিম খেতে খেতে যখন রান্না করতাম, ভাবতাম এইসময় কেউ যদি একটু আলুকুমড়ো দিয়ে ভাতেভাত বানিয়ে দিতো!
 কুমড়ো থাকতে কি আর আমরা কুমড়োর মর্ম বুঝি?

তাই (অনেক বছর পরে) আজকাল আমার কুমড়ো ভালোই লাগে!
ছক্কার রেসিপি ইন্টারনেট এ দেখে রান্নাও করেছি। পয়সা খরচ করে ISD তে মা কে জিজ্ঞেস করে জেনেছি কুমড়ো ছেঁচকির কথা। বানিয়েওছি কতবার। তাই দিয়ে এক থালা ভাত ও মেখে খেয়েছি খুশি মনে !আবার বড়াই করে তাই নিয়ে ব্লগ ও লিখেছি!
[হা কপাল কি দিনকাল পড়লো!, সেই anti-কুমড়ো আমি  কিনা  আজ  ....]

তবে যাই বলি না কেন, ইয়ে মানে  ....ওই আর কি .. কুমড়ো কুমড়োই ......
এমনি এমনি তো আর সুকুমার রায় কুমড়োপটাশ নিয়ে ছড়া লেখেননি !!!

" (যদি) কুম্‌ড়োপটাশ ডাকে— 
   সবাই যেন শাম্‌লা এঁটে গামলা চড়ে থাকে; 
   ছেঁচকি শাকের ঘন্ট বেটে মাথায় মলম মাখে; 
   শক্ত ইঁটের তপ্ত ঝামা ঘষতে থাকে নাকে! "

বিদেশে এসে দেখি ওমা এখানে কুমড়োর লাইফই আলাদা । ঠাট-বাট একদম অন্যরকম ।
বিনস, গাজর, বিট, ব্রকলির মতন  সফিস্টিকেটেড সবজিদের সাথে ওঠা বসা !
ক্রিমের মতন অভিজাত উপকরণের সাথে মিলে মিশে সুপ বানানো !
কিশমিশ, কাজু , পেস্তার সাথে হাত ধরাধরি করে কেক!
ভুরভুরে ভ্যানিলা এসেন্স গায়ে লাগিয়ে পুডিং!
আরো শোনো !
কুমড়ো দিয়ে পাস্তা পর্যন্ত!
(মরে যাই)

তারওপর এই হ্যালোউইন এর সময় যা করা হয়, সেটা যেন একেবারে বাড়াবাড়ি!
একটা গোটা ইভেন্ট কুমড়ো নিয়ে মাতামাতি, তার চোখ কান নাক এঁকে তাকে মাথায় চড়ানো । তার মধ্যে আলো জ্বালিয়ে......
আদিখ্যেতা!

যাগ্গে, ফ্রিজ এ কুমড়ো ছিল, বার করে রান্না করতে গিয়ে শুনি।.
(আমি তো আবার ওদের কথা শুনতে পাই).....
ঠিক যতটা ভাব ভেবেছিলাম ওদের মধ্যে ততটা নয়.....
কুমড়োর চেহারা নিয়ে টিটকিরি এখানেও চলে। ......

বিন্স :
আমার চেহারা দেখ লম্বা দোহারা,
যারা দেখে, চটপট প্রেমে পড়ে তারা !

গাজর:
আমার রূপ গুন ভিটামিনে ঠাসা !
সুপে আমি সুস্বাদু,হালুয়াতে খাসা !

বিট:
জগৎ ফিদা মোর রঙের বাহার,
স্টু এ আমি অনবদ্য, রুগীর আহার!

ফুলকপি:
ফুটফুটে ফুল আমি, ডালনা কি ভাজা
পছন্দ সবার আমি, সব সবজির রাজা !

হঠাৎ দেখি কুমড়ো যেন জেগে উঠলো   .........

তোরা বড্ড বেশি রিয়েল, পুষ্টি ভিটামিন,
আমি থাকি রূপকথায়, কিংবা Halloween !
তোরা থাকিস প্লেটে, রোজের খাওয়াদাওয়া,
আমি রথ রাজকন্যের, কল্পনাতে পাওয়া !
মজার আমি, তাই তো লেখেন ছড়া সুকুমার,
তোদের নেই ট্যালেন্ট, কবির ভাব জাগাবার !!

পাশে বসে ব্রকলি শুনছিলো । বললো, 

"Can you explain all that in English please?  I just do not understand the gibberish that you just said Mr. Pumpo!"

কুমড়ো একবার বাকিদের দিকে তাকালো। গড়িয়ে একটু এগিয়ে গেলো ।তারপর confidently ঝরঝরে ইংরিজিতে বললো,

I am in fairy tales, me the fat pumpkin,
I am the carriage that Cinderella was in!
I am bright orange, favourite of your queen,
I get to light up the evening of Halloween!

সব সবজি কাচুমাচু মুখে সরে পড়লো।
Halloween এর সময় , সত্যি কুমড়োর কনফিডেন্স অন্য লেভেলে!!

আমিও সরে পড়লাম ।
যাই কুমড়ো কেকের রেসিপি দেখি । Halloween এ ঠিক কুমড়ো ছেঁচকি জমবে না !
;-)

Thursday 25 October 2018

ট্রাম অফিস


আজ বেশ কিছুদিন হলো ট্রামে করে অফিস যাতায়াত করছি। আসলে অফিস মুভ হয়েছে, শহরের মাঝখানে। খুব ট্রাফিক জ্যাম হয়, সেখানে গাড়ি চালিয়ে যেতে ইচ্ছে করেনা।
তাই ভাবলাম ট্রাম ট্রাই করে দেখি।

প্রথম দিকে একটু অসুবিধে লাগছিলো ঠিকই, কারণ সবই অভ্যেসের ব্যাপার কিনা।
নিজে গাড়িতে গেলে সব কিছু যেন আমার কন্ট্রোলে। (which is not entirely true, but still.....)
প্রথম  দিকে একটু অধৈর্য লাগতো। স্টপে দাঁড়িয়ে থাকা, মিনিটে মিনিটে ঘড়ি দেখা। 
সব থেকে রাগ লাগতো যখন কিছু সেকেন্ডের জন্য ট্রাম মিস হয়ে যেত। 
মুখের সামনে দিয়ে হুশ .....

ধীরে ধীরে অভ্যেস হতে লাগলো।বাড়ি থেকে অফিস ৫৫ মিনিট। ৫ মিনিট হাঁটা বাদ দিলে ট্রামে ৫০ মিনিট।
সেই ৫০ মিনিটে অনেক রকম কাজ সারতে শুরু করলাম। বই পড়া, হিজিবিজি লেখা। তারপর লোকজন দেখতে শুরু করলাম। কোথা দিয়ে যে ৫০ মিনিট কেটে যায় আজকাল।
আসে পাশের লোকজনদের মুখ চেনা হয়ে উঠলো। প্রত্যেকটি চরিত্র ইউনিক। সকালে স্কুল কলেজ অফিস যাবার expression প্রত্যেকের আলাদা।
মনে মনে কত গল্প ফাঁদতে শুরু করলাম। সে না হয় আরেকদিন বলবো গুছিয়ে ।

আজকের গল্প "ট্রামে করে অফিস" নিয়ে  নয় ।আজকের গল্প "ট্রাম অফিস" নিয়ে।
কল্লোলের ট্রাম অফিস। 
[নেদারল্যান্ডস এ আমাদের বাঙালি ক্লাব কল্লোল]

দুর্গাপুজোর বেশ কিছু মাস আগের থেকেই শুরু হয়ে গেলো কল্লোলের প্রস্তুতি । 
অনেক কাজ। দেশের বাইরে, নিজেদের রোজকার জীবন, কাজ, সংসার ...সব সামলে চারদিন ধরে পুজো করা চাট্টিখানি কথা নয়। শুধু তো মন্ত্র পড়ে পুজো করলে চলবে না । 
বাঙালির পুজোতে আনন্দের ফুল প্যাকেজ চাই । ১০০ এ ১০০!
দেবদেবীর পুজো, including হোম যজ্ঞ অঞ্জলি সন্ধিপুজো যেমন চাই, আবার সাথে চাই পেটপুজোর এলাহি আয়োজন। তাতে ভোগ লাবড়া থেকে ফিস ফ্রাই, কিছু যেন বাদ না পরে।
(কে বুঝি এবার কাসুন্দির ও খোঁজ করেছিলেন)
তারপর চাই কালচার। নাচে গানে ভরপুর প্রোগ্রাম চাই রোজ। তাতে একটা নৃত্যনাট্য চাই, অষ্টমীতে বাংলা নাটক চাই, আবার জীবনমুখী গান ও চাই।
এছাড়া চাই আনন্দমেলা, দেবী বরণ , সিঁদুর খেলা, পুজোসংখ্যার ম্যাগাজিন। ...সব সব ।
দুর্গাপুজো includes everything, all equally important!

দুর্গাপুজোর জাঁকজমক সত্যি অন্য রকম । সে যে দেশেই থাকি না কেন ।
প্রত্যেকটি মুহূর্তের সাথে আমাদের ছোটবেলা জড়িত। প্রত্যেকটি চাহিদার সাথে কিছু স্মৃতি যা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি আলোচনায় একটা নিজের দেশের অনুভূতি।
আর তাই বোধহয়, সবাই এত পরিশ্রম করে আমরা বিদেশের মাটিতে এমনি ভাবে পুজো করতে পারি।কোথায় যেন ভক্তি, ভালোবাসা, স্মৃতি, ছোটবেলা, পরিবার, খাওয়াদাওয়া মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। 
ফাইনাল অনুভূতিটা বড্ড আনন্দের!

যাগ্গে যেটা বলছিলাম। ট্রাম অফিস ।
এই পুজোর প্রস্তুতির একটা অন্যতম অঙ্গ হয়ে উঠলো ট্রাম নং ১৭। 
সকাল ৮ থেকে ৮:৫০ আর বিকেল ৫:৩০ থেকে ৬:২০ ট্রাম নং ১৭ হয়ে উঠলো পুজোর অফিস। 

টিম দারুন ব্যস্ত।

"The next stop is Laan Copes van Cattenburch. Do not forget to use your OV chipcard after your stop has been announced......."

"হ্যালো "
"হ্যালো।  হ্যাঁ, ট্রাম থেকে বলছি ........"

"শোনো, মিষ্টির অর্ডার আজকে ফাইনাল করতেই হবে । নবমী রাতে রসমালাই নাকি গুলাবজামুন?"
প্রায় সাড়ে সাত মিনিট রসমালাই Vs গুলাবজামুনের pros/cons ডিসকাস করে তবে নিশ্চিন্ত বাঙালি । রসমালাই definitely !

" আচ্ছা, ইন্ডিয়া থেকে কেউ আসছে? একটা গেরুয়া ধুতি আর ফতুয়া চাই অষ্টমীর নাটকের সাধুর রোলের জন্য"
প্রায় সোয়া এগারো  মিনিট আলোচনার পর ধুতি ফতুয়ার ব্যবস্থা করে তবে নিশ্চিন্ত বাঙালি।

" ম্যাগাজিন software টা download করেছি, version 1.0 pdf করে পাঠালাম, একটু চেক করে ফিডব্যাক চাই, meanwhile whatsapp এ প্রিন্টার নিয়ে কথা বলছি  "
পৌনে নয় মিনিট আলোচনা।  আমাদের লোকাল পুজোসংখ্যা আলোচনা করে নিশ্চিন্ত বাঙালি ।

" চটপট বলো ।  কমিটি মিটিং এর জন্য সিঙ্গারা ৫০ টা  অর্ডার করবো নাকি ৬০? "
পাক্কা ষোলো  মিনিট হেড কাউন্ট করা হলো। যদিও গুনে ৪৫ হচ্ছে তবুও ৬০ টাই অর্ডার করা উচিত, যেন কম না পড়ে । খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বাঙালি কোনো রিস্ক নিতে রাজি নয় ।

তারই মাঝে  .......
"মা, আমার স্পোর্টসএর মোজা কোথায়? খুঁজে পাচ্ছিনা "
"আমার অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি হবে, আজকে ডিনার কি?'

"হ্যালো "
"হ্যালো।  হ্যাঁ, ট্রাম থেকে বলছি ........"

"সেকি আনন্দমেলায় ভেজিটেবিল চপ থাকবে না ? কাবাব চাট সামোসা থাকছে....."

"শোনোনা, সপ্তমী প্রোগ্রামের জন্য একটা কাঁথা স্টিচ ওড়না লাগবে"

"All flowers have been ordered. Should I ask them to deliver at 8:00?"

"ধোকার ডালনা অত সোজা না, রেসিপি পাঠিয়েছি কিন্তু আমাদের ফুড টেস্টিং এর ব্যবস্থা করতে হবে"

"স্পন্সরশিপের টাকা এসে গেছে, ইনভয়েস পাঠিয়ে দিলুম"

"Online registration বলছে ৩৫০ অষ্টমীতে !  ১০% বাফার রাখছি তাহলে.."

"তুই sure  ৫ টা ধুনুচি আছে আমাদের স্টোরে ? দশকর্মার জিনিস তো অবশ্য আসছেই "

" বলছি কি, সপ্তমী ভোগ এর জন্য এখনো কাউকে পাইনি  ........"

"পুরোহিত মশাইয়ের হোটেল বুক করে দিয়েছি, date তা একটু চেক করে নিও "

"নানা, হলটা পঞ্চমীর দিনেও বুক করে দিতে হবে..logistics ডিসকাস হয়নি আগের দিন "

"আচ্ছা রিহার্সাল এ কি বিরিয়ানির  ব্যবস্থা হবে নাকি বাটার চিকেন?"

"Facebook এ countdown এ আজকে মেনু লাগাও, কবে যেন চিংড়ি মাছের মালাইকারি?"
........
.......
.......

"The next stop is Parijsplein. Do not forget to use your OV chipcard after your stop has been announced......."

পুজো শেষ।
আজকে ট্রাম অফিস শান্ত। ফোন বাজছে না ।

আমার পাশের ডাচ ভদ্রলোক (মুখ চেনা হয়ে গেছে) বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছেন ।
এই বুঝি জিজ্ঞেস করেই ফেলবেন ...
"দূর্গা পুজো শেষ?'

ps: All characters appearing in this work are fictitious. Any resemblance to real persons, living or dead, is purely coincidental.
;-)

Monday 20 August 2018

স্কিম-স্ক্যাম (Scheme-Scam)

দেশ থেকে ফিরলাম । আবার কিছু observation নিয়ে ।
😀

দেখলাম আমাদের দেশটা হয়  স্কিম কিংবা স্ক্যাম কিংবা স্কিম-স্ক্যামে চলছে !
যেখানে যা কিনতে যাই, একটা স্কিম আছে আর নিউজ খুললেই একটা স্ক্যাম আছে !
নিস্তার নেই দুটোর থেকেই   ......

যে কোনো জিনিস "Free " পেতে আমরা সবাই বড্ড ভালোবাসি। ফ্রি কিছু পাওয়ার আনন্দে আমরা মাঝে মাঝে এটাও ভুলে যাই যে সেই জিনিষটা আদপে আমাদের দরকার আছে কিনা বা আমাদের কিছু ক্ষতি করছে কিনা ! Free মানেই "good deal "!



স্কিম ১:
সেদিন টুকটাক বাজার সেরে  আমি আর কর্তা ঢুকলাম একটা রেস্টোরেন্টে ।
সুন্দর ঝকঝকে সাজানো। বাঁশি-ড্রামস যুগলবন্দীর সুর । AC -র ঠান্ডা হাওয়া । ফিটফাট উর্দি পড়া স্মার্ট লোকজন।
Relaxed !
অর্ডার দিলাম একটা বিয়ার, একটা মার্গারিটা।
ছেলেটি এক গাল হাসি নিয়ে বললো,
"ম্যাডাম, স্কিম আছে একটা। Buy two, Get one."

সত্যি বলতে কি এক মিনিটের জন্য আমিই হতবাক! এমনি স্কিম(স্ক্যাম) ও আজকাল হচ্ছে নাকি?
বললাম, " আমি দুটো pay করে একটা কেন নেবো?"
বললো: ম্যাডাম, দুটো নিলে আরেকটা ফ্রি ! Happy Hour !
বললাম, "তাহলে Buy two, get one FREE বলা উচিত না?"
মিষ্টি হেসে বললো,  "ঐটাই বলতে চাইছিলাম" ।
তারপর কর্তার দিকে তাকিয়ে বললো , "স্যার, আপনার বিয়ারেও একই স্কিম আছে "

মেনুকার্ডটা হাতে এগিয়ে দিয়ে ছেলেটি গেলো ড্রিঙ্কস আনতে ।

মেনুকার্ডে লোভনীয় সব খাবারের ছবি । আমি আর কর্তা লোলুপ দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকিয়ে কি খাবো ভাবতে লাগলাম।
খিদে যে খুব তা নয়, তবে দৃষ্টি খিদে খুব ডেঞ্জেরাস জিনিস! ছবি দেখেই জিভে জল। পারলে সব অর্ডার করি! তাছাড়া কর্তা গিন্নি দুজনেই আমরা খাদ্যরসিক, ঐসব ক্যালোরি-ফ্যালোরি তে তেমন বিশ্বাস করিনা!
(বিশ্বাস না হয় আমাদের weighing machine কে জিজ্ঞেস করুন!)

ছেলেটি এলো একটা বিয়ার  আর একটা মার্গারিটা নিয়ে । হাসি মুখ।
ততক্ষনে আমি আর কর্তা মেনুকার্ড থেকে appetizer পছন্দ করে ফেলেছি ।

"স্যার, appetizer এও  একটা স্কিম আছে। দুটো নিলে যেইটা কম দামের সেটা ফ্রি, আর তিনটে নিলে, চতুর্থটা ফ্রি "

এই রে! Massive complicated scheme !
আমি আর কর্তা  মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম।আমরা এতক্ষন ধরে যে একটা ডিসিশন নিলাম সেইটা গুবলেট হয়ে গেলো এই স্কিম  শুনে। ....Totally confused !
কটা নিলে কটা ফ্রি --এই গণিত বুঝতে এবং ভাবতে গিয়ে ঠিক কি খেতে চাই সেটাই ভুলে গেলাম।

মন শক্ত করে বললাম : একটা Classic nachos  আর একটা Tostada chips ।
বললো:  ম্যাডাম, আরেকটা অর্ডার করে দিন, তাহলে ফোর্থ ডিশ টা ফ্রি।
বললাম:  এতো তো খেতে পারবোনা ভাই, পেট তো একটাই। তোমরা ফ্রি দিলে তো হবে না, হজমটা তো আমাদের করতে হবে। সেটা তো আর ফ্রি নয় ।
ছেলেটি আমার এই  ডায়ালগ একেবারেই appreciate করলো না  । হাসিটা যেন একটু কমে গেলো।
আমরা যেন ওর সব হিসেব ঘেঁটে দিয়েছি!

একটু বাদেই খাবার এলো । খুব ভালো টেস্ট ।
তৃপ্তি করে আমরা খেলাম, খেতে খেতে আরো একটি বিয়ার ও মার্গারিটাও অর্ডার করলাম।
পেট মন দুই ভরলো । কি তৃপ্তি! আহা....
নিন্দুকেরা যে কেন ক্যালোরি নিয়ে এতো বাজে বাজে rumour ছড়ায় বুঝিনা ।

বিল আনতে  বললাম।
ছেলেটি ততক্ষনে ট্রেতে সাজিয়ে তিন নম্বর বিয়ার আর মার্গারিটা এনে হাজির!
বললাম:  একি, এটা তো অর্ডার দিই  নি ।
এক গাল হেসে বললো, "ম্যাডাম এটা তো স্কিম এ ফ্রি ছিল"
বললাম : পেটে  তো আর জায়গা নেই ।
বললো: কিন্তু এটা তো ফ্রি ....
ফ্রি জিনিস  ও  যে কেউ প্রত্যাখ্যান করে, সেটার কোনো কন্সেপ্টই নেই বুঝলাম!

ঘড়ি দেখে বললাম: তখন তো বললে, "Happy Hour " !
আরো এক গাল হেসে ছেলেটি  বললো , "আজ সারাদিন Happy Hour ম্যাডাম "
বোঝো ঠেলা !সারাদিন Happy Hour !
খেতে পারলাম না ফ্রি ড্রিংক দুটো!
এহেন লোভনীয় স্কিম অবজ্ঞা করে বেরিয়ে যাওয়াতে ছেলেটি যারপরনাই আহত হলো বুঝতে পারলাম। মুখে আর হাসি নেই।

স্কিম ২:
মায়ের সাথে বিস্কুট কিনছিলাম।  Cookies, to be more precise.
৫০০ গ্রাম কুকিস ৫০০ টাকা। ওজনে তাতে যা কুকিজ উঠলো, আমাদের পরিবারের জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু  .......

"ম্যাডাম, একটা স্কিম আছে । ৯০০ গ্রাম নিলে ৬০০ টাকা দাম । সাথে এই cookie-jar Free"
বলে দোকানদার একটা সুন্দর প্লাস্টিকের কুকি ভরা কৌটো দেখিয়ে দিলো ।

মায়ের দিকে তাকালাম।
আমি Sure যে এতো কুকি দেখে মা আঁতকে উঠে বলবে "আরে বাবা অত কিনিস না, কে খাবে? "
এটাই expected usual response ।
কিন্তু তাকিয়ে দেখি মায়ের চোখ তখন গোলাপি ঢাকনাওয়ালা প্লাস্টিকের কৌটোয় (cookie-jar) আটকে গেছে ।
মা বললো , "কি সুন্দর না কৌটোটা?"
ব্যাস, বুঝলাম স্কিম সাকসেসফুল !
এখন সব কুকি-ফুকি ভুলে মা কেবল কৌটো দেখছে ! ঠিক অর্জুন যেমন মাছের চোখ দেখেছিলো! Totally focused !প্লাস্টিকের এমনি কৌটো (তাও আবার গোলাপি ঢাকনা)  "স্কীমে" FREE পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা? মনে মনে হয়তো ভাবছে এই কৌটো খালি হলে তাতে ছাতু রাখবে নাকি বিউলির ডাল!
দোকানদার খুশি হয়ে বললো, "মাসিমা, দিয়ে দি তাহলে ৯০০ গ্রাম?"
বুঝলাম স্কিম-স্ক্যামে জড়িয়ে পড়েছি । .....কোনো নিস্তার নেই।

একই স্কীম-স্ক্যাম দেখা গেলো এক মাসির বাড়িতেও।
মেসোকে বারবার হরলিক্স খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে করতে মাসি বললো  .....
"হরলিক্সটা শরীরের জন্য খুবই ভালো, বার বার বলছি তোর মেসোকে। কিছু ভুল বলছি বল?
তাছাড়া স্কীমে ১ কিলো হরলিক্স এর সাথে ২টো "খুব সুন্দর" কাঁচের গ্লাস FREE দিচ্ছে!"

[এখানে মা/মাসি একেবারেই কাল্পনিক চরিত্র কিন্তু। আমার মা / শাশুড়িমা কিম্বা অন্য কোনো আত্মীয়ার সাথে কোনো মিল নেই ;-)]

স্কিম ৩:
ক্যাশ কাউন্টারে  বিল পে করছিলাম।
ছেলেটি বললো , "ম্যাডাম আপনার মোবাইল নম্বরটা?"
বললাম : মোবাইল নেই!
একটু অবাক হয়ে বললো , "আমাদের দোকানের মেম্বারশিপ কার্ড আছে?"
বললাম : নেই !
বললো : একটা বানিয়ে দি?
বললাম : না ,  কার্ড বানাতে হবে না , আপনি বিলটা  ক্লিয়ার করে দিন ।
বললো : কার্ডটা বানিয়ে নিন ম্যাডাম,  নতুন কার্ড বানালে একটা স্কিম আছে।  আপনি পাবেন "সুহানা স্পা" র তরফ থেকে একটা ফ্রি ম্যাসাজ আর একটা "সুহানা" বডি লোশন ।
বললাম : না লাগবে না, প্লিস বিলটা বানান ।
নাছোড়বান্দা ।
"কিন্তু ম্যাডাম, সুহানার ফ্রি ম্যাসাজটা খুবই ভালো অফার , এমনি স্কিম পাবেন না কোথাও।" 
গম্ভীর মুখে বললাম "আমি ম্যাসাজ এবং বডি লোশন একদম পছন্দ করিনা  ...

ছেলেটির হাসি ভ্যানিশ ।
কোনোরকমে স্কিম-স্ক্যাম থেকে বেঁচে পালালাম।

দেশে বড্ড বেশি স্কিম ! নানা সরি, স্কিম -স্ক্যাম !!
😀

[.to be continued, যদি না কেউ পেটায় এইটা পড়ে ]

Sunday 22 July 2018

রাজা প্রজা

pc:whatsapp 

রূপে গুনে সব কিছুতে আমি উত্তম অতি,
সারা বাংলা হাবুডুবু ,  প্রেমে আমার প্রতি !
চকচকে এই রুপালি রঙে মাছের বাজার আলো,
বাজার জুড়ে হচ্ছে নিলাম, ভাবতে লাগে ভালো !
রুই কাতলা বড্ড বোরিং, রোজকার ঝোল পাতে,
ট্যালটেলে এক ডেকচি ভরা, সাঁতরে বেড়ায় তাতে!
পারশে মাছের মেনে নিলাম মন্দ নয়কো স্বাদ,
এমন কিছু আহামরি নয়, দিতে পারো বাদ !  
বাটাখানা কেমন জানি নামেই খেয়েছে মার,
যার নামে জুতো ফেমাস, কি আর হবে তার??
ট্যাংরাখানা টেস্টি বটে তবে বড্ড যেন রোগা,
চেহারায় নেই চটক কোনো, পিলে জ্বরে ভোগা !
শোল, আড় বড্ড ফ্যাটি, রাঁধবে তুমি খেটে ,
খাবার পরে চাই Gelusil, সয়না তেমন পেটে !
ভেটকি জানি হট ফেভারিট, দারুন ফিস fry,
চোওয়া ঢেকুরের গ্যারেন্টি, দিলাম আমি ভাই !
চিংড়িভায়া ভোলাভালা তবে একটুখানি বোকা,
নিজেকে ভাবে মাছ কিন্তু আসলে জলের পোকা! 
পুঁটি, মোরোলা, কই, এরা মাছ রাজ্যে নগন্য,
আমার সাথে এক প্লেটে থাকলে জীবন ধন্য!

নিজের কথা কি আর বলি, সব কিছুতেই স্বাদ,
এমন কোনো অংশ নেই যা দিতে পারো বাদ।
ল্যাজা ,মুড়ো, গাদা, পিঠ, সবই যাবে পেটে,
যাই বানাবে আমায় দিয়ে খাবে আঙ্গুল চেটে !
ঝোল রাঁধবে বেগুন দিয়ে কিম্বা সর্ষে ঝাল,
ভাপা দিয়ে মেখে তুমি, ভাত খাবে এক থাল।
খিচুড়ির সাথে জমবে ভাজা মুচমুচে আর কড়া ,
প্রথম পাতে খেতে পারো আমার ডিমের  বড়া !!
আমার মাথার ঘন্ট বানাও পুঁইশাক দিয়ে কষে,
লিখে দিলাম খাবে যে জন ভাত চাইবে শেষে!
জানি আমার  দাম খানা একটু বেশি চড়া,
যে সে মাছ খাচ্ছ না ভাই, মাছের রাজা সেরা !
কর্তা খুশি, গিন্নি খুশি, ভিষণ খুশি জামাই ,
মাছের রাজা থাকলে পাতে জীবনে আর কি চাই?

রুই কাতলা বাটা পারসে কই মৌরলা চিংড়ি ট্যাংরা 
[Chorus ]:

ওরে এবার চুপ কর তুই, আচ্ছা হয়েছে জ্বালা , 
তোর ঢাক শুনে আমাদের কান(কো) ঝালাপালা।
তোর কাঁটা বাছতে গিয়ে চোখের power বাড়ে,
খাবার পরে এক সপ্তাহ বাড়িতে গন্ধ ছাড়ে!
বর্ষা যাবে, তুই ও যাবি, এত গর্ব কিসে?
যে কদিন আছিস সাথে, থাক না মিলে মিশে ।
একটাই life, সবই মায়া, ঝাল কিংবা ভাজা,
গরম তেলে পড়লে একই, প্রজা হোক বা রাজা!

-দয়িতা রায় 

Monday 16 July 2018

বিশ্বকাপের হিজিবিজি


pc: Indiatoday.in

বসে ছিলাম একটি মাস, অসীম ধৈর্য ধরে,
কে জিতবে আমায়, কেগো নেবে আপন করে !
কান্না হাসি উত্তেজনায়, ভরিয়ে সবার মন,
ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ আটকে অনুক্ষণ!
খেলার মতন খেলা হলো, হে হারে কে জেতে,
ছুটলো সবাই বলের সাথে, উঠলো জগত মেতে!
মাতলাম আমি ফরাসি হয়ে, জিতের উন্মাদনা,
বইলাম আমি ক্রোয়েট চোখে হয়ে অশ্রুকণা !

সবার চাইতে বড় হলো খেলার মাঠে খেলা,
হারজিত তো আছেই লেগে, কাপ মেডেলের মেলা!
কেউ জিতবে কেউ বা যাবে ভালো খেলেও হেরে,
কেউবা আবার হেরেও নেবে সকলের মন কেড়ে!
আজ স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে দিলো ছোট্ট একটি দেশ,
থাকবে বেঁচে সবার মনে এই  স্বপ্ন দেখার রেশ.....
কান্না হাসি পাশাপাশি, তবেই জীবন চলে,
হারকে যে নেয় আলিঙ্গনে, তাকেই জয়ী বলে।

স্বপ্ন নতুন উঠবে সেজে কত আমায়  ঘিরে,
কান্না হাসির লোভে আবার আসবো আমি ফিরে!
দিন গোনা আজ শুরু হলো, আবার নামবো মাঠে,
হাসবো কাঁদবো খেলবো আবার হিজিবিজির পাঠে!

pc:dnaindia.com

হিজিবিজি আজ খুব খুশি।হিজিবিজির দুই বন্ধু পাঠালো Real-time World Cup coverage !!
With Camera person Saurabh SenGupta from Croatia and Debasmita Moulick from Moscow!












Sunday 15 July 2018

......মহারানীর ডায়রি থেকে


edmontonjournal.com

দিনটা কাল কাটলো বাজে, চারিদিকে ডামাডোল,
দুপুরে এলো বাবাজীবন, বিকেলে দুটো গোল !
ঘড়ির কাঁটায় ৮ মিনিট লেট, এমনি অবহেলা !
হাঁটলো আমার পায়ে পায়ে, মারলো দুবার ঠেলা!
অদ্ভুত এই মানুষখানি কি করে চালায় দেশ,
Mel-বৌমা মিষ্টি হাসি , লাগলো আমার বেশ !

দুই বৌমা টেনিস দেখে ফিরলো বাড়ি কাল,
বড় বৌমা ভাত বসালো, ছোট মুসুরির ডাল !
আজ বসবো শান্তিমনে,  প্রাসাদে একলা বিকেলবেলা,
ফিস এন্ড চিপস খেতে খেতে জমিয়ে দেখবো খেলা !!








Friday 13 July 2018

হরি বোল

89.35
Croatia 1 -1  England

বাড়িতে হরি, মাঠেও হরি,
চারিদিকে আজ হরি হে,
আজকে দুগোল যে দেবে ভাই
আমার মনের হরি সে !

হরি বোল হরি বোল হরি বোল হরি বোল .........

শ্বেত বসন পরনে হরি,
মাঠময় কত শোভা হে,
আজকে দুগোল দেবেই দেবে
আমার মনের হরি সে !

হরি বোল হরি বোল হরি বোল হরি বোল .........

ছোটবৌ, তুমি পয়া । এস আমার পাশে বসো । একসাথে কীর্তনটা ধরো ।
এই বয়সে কি এতো টেনশান একা নিতে পারি?
খাটের তলা থেকে গয়নার বাক্সটা নিয়ে এসো। আজ জিতলে সব তোমার। .

Extra time:
Croatia 2 -1  England

ছোটবৌ: চাইনা আমার রত্নচূড়া কানপাশা সাতনড়ি
                হারজিত সব মায়া রানীমা , আমার আছে হরি!!!





Friday 6 July 2018

বাঙালির স্বপ্নভঙ্গ

pc:thehindu.com


আজি এ ম্যাচে কে করিল ভর,
বল যে পশিল গোলের পর,
কেমনে পশিল প্রবল বেগে গোল দুইদুইখান,
না জানি কেনরে এতদিন পরে কাঁদিয়া উঠিল প্রাণ।.......

কাঁদিয়া উঠিল প্রাণ,
আজ বাঙালির মন ভারি,
ওরে লুকাকুর তেজ, লুকাকুর দৌড় রুধিয়া রাখিতে নারি।

থর থর করি কাঁপিছে অধর,
মিস রাশিরাশি দেখিছে বসে,
ফুলিয়া ফুলিয়া হানিল নেইমার
গরজি উঠিছে দারুন রোষে।
হেথায় হোথায় ছুটিয়া বেড়ায়,
ঘুরিয়া পড়িয়া মাটিতে গড়ায়,
গোল দিতে চায়, দেখিতে না পায় কোথায় গোলের দ্বার।
কেন রে বিধাতা পাষান হেন,
চারিদিকে বেলজিয়ান কেন,
ভাঙলো ওদের কঠিন বাঁধন,
এক গোল তবু করলো সাধন।...
নাটকের পর নাটক করিয়া,
কেবল যে চাস পেনাল্টি বর,
বিশ্বজয়ী দল যে তোরা,
বরং শক্ত পায়ে বলটা ধর!

বাঙালির আঁখিতে অশ্রুধারা,
বাঙালি দুঃখে দিশেহারা,
বাঙালি জগত প্লাবিয়া হৃদয় ভাঙিয়া
আকুল পাষানপারা।
উপোষ করিয়া, পাঁচালি পড়িয়া ,
হলুদ-সবুজের পতাকা উড়াইয়া,
ব্রাজিলপুজোতে অঞ্জলি দিয়েছিলো ঢালি,
বৃথা মানসিক একান্ন টাকা,
গোলখানা তবু রয়ে গেলো ফাঁকা,
হায়রে অফিস কামাই হলো খালি।

এতো কাপ আছে, এতো ডিশ আছে , তবুও বাঙালি তোর,
ব্রাজিল ঘিরেই যত স্বপ্ন,  ব্রাজিল প্রেমে বিভোর।
কি জানি কি হলো আজি , কাঁদিয়া উঠিল প্রাণ,
দূর হতে শুনি পরের বিশ্বকাপের গান,
এখন ভুলিয়া দুঃখ তোর,
আসিবে আবার নতুন ভোর,
ভাঙ ভাঙ ভাঙড়ে এ শাপ, আঘাতে আঘাত কর,
ব্রাজিল আবার আসিবে ফিরিয়া,
চারটি বছর পর !

Tuesday 3 July 2018

রানী ও রূপকথা


[সকালবেলা । রাজপ্রাসাদ ।  মহারানীমা ব্রাশ করছেন]

ছোটবৌ: রানীমা, চা দেবো ?

[রানীমা একবার কটমট করে তাকিয়ে continues to brush]

ছোটবৌ: রানীমা,  চা দেবো ?

মহারানী: আজকের দিনে কি আমি কিছু খেতে পারি? আমার গলা দিয়ে এক ঢোক জল নামবে? আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারো? তুমি আর কি বুঝবে ছোটবৌ? আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি!

ছোটবৌ: না মানে , ভালো করে আদা দিয়ে চা বানিয়েছিলাম, তাই ভাবলাম জিজ্ঞেস করি।
তবে ফুটবল তো ফুটবলই !  খেলা ! তার জন্য আপনি নির্জলা উপোষ করে থাকবেন?

মহারানী: ফুটবল শুধু ফুটবল? কেবল "খেলা"? তুমি এটা বলতে পারলে?  তোমাকে হরি বলেনি ফুটবল মানে কি?  হরি...... হরি.......হরি। ....
যাও, রাজজোতিষী, রাজবৈদ্য  আর রাজপুরোহিত  কে তলব করো , আমার দরকারি কথা আছে!

ছোটবৌ:যথাজ্ঞা  রানীমা!

মহারানী রাজ্যোতিষিকে : 
খেলবে নাকি? ছুটবে নাকি?
করো কি ভবিষৎবাণী?
চলবে নাকি? উড়বে নাকি?
আমাদের  হ্যারি- কাহানি ?

মহারানী রাজপুরোহিতকে:
কোন দিকে  আজ সূয্যি প্রণাম
কোন হাতে মাদুলি সুতো?
কোন ঘটে বাবা জল দিলে আজ
পাবে সে সোনার জুতো ?

মহারানী রাজবদ্যিকে  :
রাজবদ্যি রেডি থেকো তুমি,
বড় আজ হার্টে চাপ,
থর থর করে কাঁপছে শরীর
কপালে বাড়ছে তাপ !

[নিজের মনে বিড় বিড় করে]
আজকে যদি গোল মিস হয়
ত্যাজিব রাজ্য, ছাড়িব সিংহাসন,
গেরুয়া পড়িয়া হবো বৈরাগী
করিলাম এই পণ!

টেনসন এ বাংলা বলছিলাম, এবার নিজের মাতৃভাষায়। ...

Dear o dear, how do I bear,
Full ninety minutes of pain?
Dear o dear,  put on your gear
Run for the cup Harry Kane!

রাজদূত:  মহারানী আজকের স্কোর!!!!!!penalty shootout!!
England 4 - 3 Columbia

মহারানী: YES!!!!!   জয় মা! ছোটবৌ, এবার আদা  দিয়ে চা খাওয়াও। ..............














Monday 2 July 2018

নেই-মার্ আছে-মার

pc:Whatsapp

হারাধনের চোদ্দ ছেলে,  দোষ নেইকো কারো,
দুইটা গেলো পেনাল্টি শুটে, রইলো বাকি বারো!

আজকে মাঠে নামবে ব্রাজিল, হলুদ সবুজ মেলা,
মেক্সিকো  টিম দেবে টক্কর, জমে যাবে খেলা !
বাংলাজোড়া ভক্ত নিয়ে বল পায়ে নেই-মার্ ,
পারবে নাকি করতে আজি মেক্সিকো ছারখার ?

বাঙালির আজ উপোষ, নুন আর চিনি জল,
মায়ের চরণে কাটাবে দিন, ভক্তি যে  অটল!
ছুটবে বাঙালি হিরোর সাথে, ঝড়াবে আজ ঘাম,
মানসিক আজ জোড়া ইলিশ, সাথে ল্যাংড়া আম!
যারা করতো কাল অবধি মেসিদেবের জপ,
আজ তারাও, ক্যাম্প বদল করলো ঝপাঝপ!

"আজকে মাগো, সব শক্তি দিও ওনার পায়ে,
বল নিয়ে বুলেট যেন গোলের দিকে ধায়ে !
আজকে মাগো, তোমার হাতে দিলাম সবই ছেড়ে
ওনার পায়েই বলটা রেখো, কেউ নেয় না কেড়ে !
নেই-মার্ নাম বদলে, হোক যে আছে-মার্,
গোলের ভেতর রকেট হয়ে ঢুকবে যে কিক তার !
আজকে যেন গোনাগুন্তির গল্প আর না থাকে,
আশীর্বাদী ফুলে গোলে মাগো ভরিয়ে রেখো তাকে"


Sunday 1 July 2018

বিদায় আর্জেন্টিনা পর্তুগাল .....


pc:twitter.com

হারাধনের ষোলো ছেলে, খেললো কষে বল,
থাকলো টিকে কেউ, ফিরলো কিছু দল!
ষোলোর খেলায় প্রথম দিনেই নামলো দুই রাজা,
ভক্তরা সব বসলো ঘিরে উত্তেজনায় তাজা!

France  4 - 3 Argentina
রাজা ১:

মেসিমেসি জয়ধনী, ভক্তেদের উল্লাস
রাজা যেন আনমনা, নেই কোনো উচ্ছাস!
ফ্রান্স এমন ছুটলো মাঠে, যেই না পায়ে বল,
হেঁটে বেড়ায় সারা মাঠে তখন রাজার দল ।
রাজার দলে অভিজ্ঞতা, ফরাসি দলে গতি,
উনিশ কেবল, তবু Kylian দেখালো কেরামতি!
বিশ্বকাপের স্বপ্ন ভেঙে, ফিরলো রাজা ঘরে,
হিজিবিজি হাপুস হুপুস কাঁদে রাজার তরে !

Uruguay  2 - 1 Portugal
মহারাজা ২:

রাজার পায়ের দেখতে ম্যাজিক, হাজির সকল ফ্যান,
জমবে খেলা,  রাজার এবার বিশ্বকাপে ধ্যান !
ম্যাজিক যেন ফুরিয়ে গেলো,  কোথায় রাজার মন,
রাজার মুখে রাগের ঝলক, স্তব্ধ প্রজাগণ ।
Cavani তার পায়ের জোরে, জানালো সে সেরা,
বুঝলো রাজা , আর হলো না, কপালে আছে ফেরা ।
বিশ্বকাপের স্বপ্ন ভেঙে, ফিরলো রাজা ঘরে,
হিজিবিজি হাপুস হুপুস কাঁদে রাজার তরে !

তোমরা রাজা ফুটবলের, থাকবে মোদের মনে,
তোমাদেরই অপেক্ষাতে ভক্তরা  দিন গোনে !!
হার জিতেই খেলার মজা, তাই নিয়ে এই পদ্য, 
হারাধনের ষোলোর থেকে রইলো বাকি চোদ্দ!






Thursday 28 June 2018

ইহা সম্ভব কি "কোরিয়া" ?

পাঠকেরা চাইছেন হিজিবিজি "ওয়ার্ল্ড কাপ " cover করুক!
তাই গড়গড়িয়ে ছড়া বেরোচ্ছে। ......
;-)

pc: ndtv.com

পই পই করে বলেছিনু , হাতে দুই কান ধরিয়া,
মাঠে যদি নামোই তবে, নেমো পাঁচালি পড়িয়া!

"বিশ্বকাপ বহুবার জেতা, আছে আলমারি  ভরিয়া,
পাঁচখান গোল এমনিই হবে, বিশেষ কিছু না করিয়া" !

বিশ্বজয়ীর ভাবখানা মাঠে, "কেয়ার করি থোড়িয়া", 
কোথায় সে টিম, ভাবতো যারা "জি-জান দেবো লড়িয়া"!

এলো বল পায়ে, পারলোনা পায়েতে রাখিতে ধরিয়া,
অজস্র কিক এদিক ওদিক, অকারণে ঘাম ঝড়িয়া !

হায় রে কালী কি করালি,  খেললো হয়ে সে মরিয়া,
বিশ্বজয়ী ছুটলো কেবল,গোল দিয়ে গেলো কোরিয়া !

ছোট্ট সে দেশ খেললো এমন,  নিলো যে মন হরিয়া,
বিশ্বজয়ী হারালো খেতাব,  গেলো লজ্জায় সরিয়া !

       তবে.....

pc:whatsapp,thanks D
ব্রাজিল বাঁচিলো পাঁচালির জোরে, বাঙালিরা  দিলদরিয়া,
দিলো মায়ের পায়ে নামগোত্রের ঠিক ফুলখানি চড়িয়া !









Saturday 16 June 2018

PHI-PHA 2018


FIFA শুরু! 
বাঙালির মারাত্মক চাপ! 
এখন এক মাস কেবল সোফায় বসে থাকা!
ফুটবল তো নয়, যেন যমে মানুষে টানাটানি! 
টেনশন, চা, সিগারেট, পায়চারি, উত্তেজনা! 
প্রত্যেকটা প্লেয়ারের সাথে মনে মনে সারা মাঠ দৌড়ে বেড়ানো  .....  
ফরওয়ার্ড, রাইট ব্যাক ,মিড্ ফিল্ড, গোলকিপার ...সব স্ট্রাটেজি ভেবে রাখা ! 
জার্সি, জুতো, মোজা  .....সব রেডি !
ফুটবল নিয়ে কোনও ইয়ার্কি নয়. Be serious!
পায়ে বল পেলেই   .....ব্যাস  .....গোল!!!!!!!!!!


হই হুল্লোড় মত্ত সবাই,গরম অফিস বাজার ,
ফুটবল-পুজো মন মাতাতে এসেছে যে আবার।
নতুন রঙে,নতুন ঢঙে, উঠলো পাড়া সেজে,
ধ্যাম কুরকুর রবে পুজোর বাদ্দি ওঠে বেজে।
জগত জুড়ে দেশ বিদেশে ওঠে সবাই মেতে,
ছেলেবুড়ো এক পা তুলে, চায় রাশিয়া যেতে।
বাঙালি বসে কবিতা লেখে, প্রিয় তার ফুটবল,
সোফায় বসে আবেগে তার,ভরে আসে চোখে জল।

বাঙালির কাছে ব্রাজিল সেরা, ভগবান তার পেলে,
হলুদ সবুজ জার্সি গায়ে, বড় হয় তার ছেলে!
বাঙালির কাছে দ্বিতীয় পদে, প্রিয় আর্জেন্টিনা,
ওলিতে-গলিতে খেলে বড় হয় বাঙালির মারাদোনা !
তৃতীয় পদে এবার রয়েছে রোনালদো ভাই বসে,
পেনাল্টিটা মারলো কেমন কায়দা করে কষে !

কর্তা বলেন , ওহে গিন্নি আজকে নিয়েছি ছুটি,
ম্যাচ এর সময় জমিয়ে বানাও কষা মাংস রুটি!
সাথে জিলিপি খান দুই আর ল্যাংড়া মিষ্টি আম,
জব্বর খেলা আজ আছে মাঠে, প্রচুর ঝড়বে ঘাম!
TV-র রিমোট হাতছাড়া বলে গিন্নি ক্ষেপে আগুন,
তারওপরে হুকুম শুনে, কাটা ঘায়ে পড়ে নুন!
রেগে মেগে গিন্নি বলেন, ডাকো Pizza-র গাড়ি,
রান্নাঘরে ঢুকবো না আর , তোমার বড্ড বাড়াবাড়ি!

বাঙালি আজকে দেখবে খেলা, ধরবে তাতে ত্রূটি,
একখানা শট ফস্কে গেলে  রেগেমেগে ভ্রূকুটি !
ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান, অভিজ্ঞতা নয় কম,
টেকনিক সব রক্তে আছে, ফুসফুসে আছে দম !
স্বপ্নে হবে পেনাল্টি শুট, চিৎকার ডামাডোল,
পাশবালিশ আঁকড়ে ধরে বলবে বাঙালি "গোল"!!

এ আবেগ তুমি হে বাঙালি দিওনাগো যেতে হারিয়ে,
ফুটবল এত ভালোবাসো, রাখো প্রেম এই জাগিয়ে।




[দয়া করিয়া কবিকে মারিবেন না..উনিও বাঙালি ..]



Friday 25 May 2018

জাপান কাহিনী ৫:"বড্ড বেশি" সেফ!

pc: youtube.com
জাপানের কিছু গল্প আগেও লিখেছি ।
জাপান কাহিনী ৪.
সত্যি বলতে কি, ওখানে থাকাকালীন লেখালেখির  আরেকটু সময় এবং ঝোঁক থাকলে এতদিনে বই লিখে ফেলতে পারতাম।
তখন নানা চাপে [ধরে নেওয়া যাক, মেনলি পড়াশোনা😄], ঠিক সময় করে গুছিয়ে লিখিনি কিছু। এখন মাঝে মাঝে গল্প করতে গিয়ে, স্মৃতির ফাঁক ফোকরে আটকে থাকা কিছু ঘটনা বেরিয়ে আসে.....

স্কলারশিপের পয়সা বেশ ভালো ছিলো। তবে খরচের হাত ও বেশ ভালো ছিলো । তাই ঠিক গুছিয়ে ভবিষতের কথা ভেবে কিছু কেনা হয়ে উঠতো না । এমনি ব্যালান্সড(??) আয়-ব্যায় নিয়ে ভালোই চলছিল ।কিন্তু এক (সত্যি শুভাকাঙ্ক্ষী ) দাদার উপদেশ এলো। ..
' উল্টো পাল্টা এতো খরচ না করে একটা ল্যাপটপ কিনলে পারিস তো ! তোরই কাজে দেবে !'
[সত্যি,বয়স এবং অভিজ্ঞতা দারুন জিনিস, পারফেক্ট উপদেশ। আরে নানা দাদা, তোমাকে বুড়ো বলিনি  😄]
কথাটা মনে ধরলো।
কিছুদিন পয়সা জমিয়ে, শুভ মুহূর্ত দেখে কিনে ফেললাম একটা ল্যাপটপ।
TOSHIBA ! (yess !!!)

বলা বাহুল্য, আজ থেকে ২০ বছর আগে, নিজের পয়সায় একটা ল্যাপটপ কেনার আনন্দ কিন্তু একেবারে অন্যরকম ছিল , আকাশ ছোঁয়া!

তার দুটো কারণ:
১. কোনোদিন ভাবিনি student অবস্থায় নিজের পয়সায় একটা জলজ্যান্ত কম্পিউটার কিনতে পারবো ।
২. জাপান যাবার আগে কম্পিউটার নামক জিনিসটাতে কোনোদিন হাতই  দিই  নি, নিজের হাতে পাওয়া তো দূরের কথা ।
[মনে পড়ে, বেনারসে যখন M.Sc করছি, তখন আমার ইউনিভার্সিটি প্রফেসর একটা কম্পিউটার কিনেছিলেন। আমাদের ১০ জন student কে শীততাপনিয়ন্ত্রিত ঘরে রাখা বাক্সটার দিকে দেখিয়ে বলেছিলেন, "ওই যে কম্পিউটার, সাবধান, জুতো খুলে রুমে ঢুকবে, হাত দেবেনা "] 

.......তাই সব মিলিয়ে একটা দারুন অনুভূতি! গর্ব, আনন্দ, shock ....সব মিলে মিশে একাকার।

ল্যাপটপ এর ব্যাগ হয়ে উঠলো আমার দিবারাত্রের সঙ্গী । মেশিনটা সারাক্ষন আমার কাঁধে কিংবা হাতে কিংবা টেবিলে,...সব সময় চোখের সামনে, পারলে ছুঁয়ে থাকা ।অনেকটা ছোটবেলায় পুজোর সময় নতুন Bata-র জুতোর  মতন, বালিশের পাশে রেখে শুতেও  গেছি ।
মনে পড়ে ? ঠিক সেমনি।

যাচ্ছিলাম Kobe থেকে Hiroshima দুদিনের ছুটিতে । পিঠে জামাকাপড়ের ব্যাগ, হাতে ল্যাপটপ এর ব্যাগ । স্টেশনে বসে কফি কাপ হাতে লোকজন দেখছিলাম, ট্রেনের অপেক্ষায় ।
ঘড়ি ধরে ৭:৫৭ এ  ট্রেন এসে দাঁড়ালো । জাপানের হাই স্পিড ট্রেন shinkansen । দেখেই আমি
মুগ্ধ ।যেন রূপকথা। ঝকঝক করছে । অটোমেটিক দরজা খুলে গেলো। ২ মিনিট স্টপ ।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতন উঠে গেলাম ট্রেনে , totally hypnotized ।
[হিন্দি সিনেমায় গ্রাম থেকে বোম্বে শহরে এসে Govinda-র  যেমন মুখটা হয়  ঠিক তেমনি মুখের ভাব ]
গুছিয়ে বসলাম, ট্রেন ছেড়ে দিলো।

Excitement-এর লেভেলটা  বুঝিয়ে বলা মুশকিল। দুর্গাপুরের মতন ছোট শহরে এ বড়  হওয়া নিতান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি, জাপানের shinkansen এ বসে, হাতে নিজের কেনা ল্যাপটপ ব্যাগ ঝুলিয়ে Hiroshima বেড়াতে যাচ্ছি   ...ব্যাপারটাই কেমন জানি স্বপ্নের মতন।
সে যাগ্গে, গাড়ি ছুটলো হিরোশিমার দিকে।
জানলার বাইরে হু হা করে মাঠ গাছ  বাড়ি ঘর ছুটে চললো। আমি Shinkansen এর স্পিডে মোহিত হয়ে তাই দেখতে লাগলাম ।

হঠাৎ......
আমার ল্যাপটপ ব্যাগ ?
পাশে রাখা শুধু জামাকাপড়ের ব্যাগ ....
এদিক ওদিক তাকালাম । ব্যাপারটা বিশ্বাসই হচ্ছে না, ওটা তো সারাক্ষন আমার কাঁধে থাকে !
মাথার ওপরের শেলফ এ দেখলাম।
পায়ের কাছে, সিটের নিচে।
....কোথাও নেই!
বাবা মা সাথে নেই যে বকা খাবার ভয়!
কিন্তু দুঃখে চোখে জল এসে গেলো । বহু কষ্টে জমানো টাকা দিয়ে কেনা বড্ড প্রিয় একটা জিনিস নিজের গাফিলতিতে হারালাম। চোখ দিয়ে তখন ঝরঝর করে জল ।
সামনের জাপানি মহিলা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন সব ঠিক আছে কিনা ।
কি একটা উত্তর দিলাম মনে নেই...
উনি ওনার পাশের ভদ্রলোকের সাথে জাপানিতে কিছু কথা বলে তারপর আমাকে বললেন, তুমি পরের স্টেশন Himeji তে নেমে যাও , উল্টো দিকের গাড়ি ধরে Kobe  ফিরে যাও , পেয়ে যাবে ।

তখন রাগে দুঃখে মাথায় আগুন জ্বলছে। .."পেয়ে যাবে" শুনে সেই আগুনে যেন ঘি পড়লো।

নেহাত জাপানিটা তখনও পাল্টা জাপানিতে উত্তর দেবার মতন রপ্ত হয়নি, তাই চুপ ছিলাম ।
তবে মনে মনে ওনাকে বাংলায় বললাম  ......
"  ইসসসসস পেয়ে যাবে! তাই কখনো পাওয়া যায়? ৩০ মিনিট Shinkansen  এ চেপে Himeji , নেমে আবার টিকিট কেটে উল্টো দিকের প্লাটফর্ম থেকে Kobe -র গাড়ি।.সব মিলিয়ে দেড় ঘন্টা মিনিমাম !! স্টেশন এ ফেলে আসা ল্যাপটপ পেয়ে যাবো? বললেই হলো? যা খুশি সান্তনা দিলেই হলো? যত্ত সব "

Himeji তে নামলাম ।
টিকিট  কেটে পরের ট্রেনে Kobe । Shinkansen আর নয়, 'পাতি' লোকাল ট্রেন । সারাক্ষন যেখানে যত ঠাকুর এর নাম জানি তাদের ডাকতে ডাকতে চললাম।  দুচারখানা মানসিক ও করেছিলাম হয়তো , মনে নেই!
পেয়ে গেলে ওই দেবো, পেয়ে গেলে তাই করবো। একেবারে মরিয়া!
ধিকধিক করে লোকাল ট্রেন Kobe পৌঁছলো এক শতাব্দী পরে ।
নেমেই চোখ গেলো উল্টো দিকের প্লাটফর্ম এ ।
ঠিক যেই সিটে বসে কফি খাচ্ছিলাম তার ওপর রাখা আমার ল্যাপটপ ব্যাগ।
এক চুল নড়ে নি!
ঠিক দেখছি তো?

"দিলওয়ালে দুলহানিয়া"র  লাস্ট সিনের  শারুখ-কাজল স্টাইলে ছুটে গেলাম। .....
চোখে জল,জড়িয়ে ধরলাম আমার ল্যাপটপ ব্যাগকে। 

ট্রেনের ভদ্রমহিলাকে মনে মনে "সরি" বললাম , সত্যি উনি জানতেন ওনার দেশ "বড্ড সেফ"!
তাই বলেছিলেন "পেয়ে যাবে"।

[এই রে আবার একটা গল্প মনে পড়ছে।....;-) ]

Wednesday 16 May 2018

ভিন্ন স্বাদের ভ্যাকেশন


খুব একটা প্ল্যানিং না করে বেরিয়ে পড়লাম !
কর্তা অফিসের কাজে টুরে| তার মধ্যে দুদিন স্কুল অফিস ছুটি, উইক এন্ড নিয়ে চার দিন!
১৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে চার দিন বাড়িতে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না!  এমনিতে সারা সপ্তাহ কাজের পর ছুটিতে বাড়িতে বসে থাকতে হয়তো ভালোই লাগে তবে এক্ষেত্রে সমস্যা দুইখান।
এক হলো, বাড়িতে থাকলে সংসারের কাজের কোনো শেষ নেই। ওয়াশিংমেশিন আর ডিশওয়াসার  যেন সারাদিন হাতছানি দিয়ে ডাকে । ঘরের কোনে কোথাও ধুলো, কোথাও ঝুল উঁকি মারে, শান্তি মনে বসতে দেয় না ।
দুই হলো এই যে তেরো বছরের ছেলেটি, ছুটি থাকলে তার হাত থেকে ওই সর্বনাশী মেশিনটা নামানো মুশকিল।  হয় ফোন, নয় ipad !!
উপরোক্ত দুই সমস্যার হাত থেকে খানিক মুক্তি পাবার আশায় দুইজন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম Groningen শহর এর পথে ।
ওখানে এক বান্ধবী অনেকদিন  ধরেই বলছিলো আসতে, হয়ে উঠছিলো না। 
সুযোগ হলো ।

অফিসে অনেকে শুনে বললো, দূর দূর ওখানে কিস্সু নেই । তারওপর  যখন শুনলো যে ১৩ বছরের ছেলে আর আমি যাচ্ছি, একজন বললো, একটু রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না ব্যাপারটা? ওখানে ১৩ বছরের ভালো লাগার তেমন কিছু নেই। ছেলে বোর হয়ে যাবে একেবারে!
কেউ কেউ মুচকি হেসে বললো, "ভালোয় ভালোয় ঘুরে এসো ", কোথায় যেন সেই মুচকির মধ্যে একটু সাবধানবাণী !

যাগ্গে, ছেলেকে প্রস্তাবটা দিলাম ! তখন অবশ্য সব বুকিং হয়ে গেছে , তাই ঠিক প্রস্তাব নয় ।
এক মুহূর্ত নিস্তব্ধতা । জিজ্ঞেস করলো, "ওখানে গিয়ে কি করবো?"
যাচ্ছলে !এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক তৈরী ছিলোনা।

...মানে .....ওই টুরিস্টদের মতন ঘুরে ঘুরে শহরটা দেখবো!
[মা তখন যা মাথায় এলো বলে দিলো]

"কি আছে দেখার? আমি কিন্তু কোনো মিউজিয়াম যাবো না। আমি বেশি হাঁটবো না কিন্তু বলে দিলাম "

....আরে নানা, আমরা দুজন রিলাক্স করবো খালি। একটু বেরোবো, একটু হোটেলে থাকবো , একটু খাবো , ছবি তুলবো। ..ব্যাস!
[মা তখন আপ্রাণ চেষ্টা করছে মাথা ঠান্ডা রাখার]

"হোটেল এ নিশ্চয় wi-fi  আছে?'

...সে তো আছেই, সাথে সুইমিং পুল ও আছে।
[মা তখন প্লানটা ভালো লাগানোর জন্য মরিয়া]


"তাহলে কিন্তু হোটেল থেকে কোথাও বেরোবো না"

মা মাথা নাড়লো ।এক গাল হেসে মেনে নিলো ছেলে।
[মা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো , মনে মনে বললো, আগে তো চলো, তাপর দেখছি !!]

মা ছেলের এমনি ভ্যাকেশন  এই প্রথম ! 
খুব  হৈ  হৈ করে আমরা প্যাকিং করে ফেললাম। রাস্তায় খাবার জন্য ব্যাগে  চিপস, চকোলেট আর কিছু ফ্র্রুট জুস্ ।জামা কাপড় , সুইমিং কস্টিউম, গল্পের বই, ipad , বিভিন্ন রকমের চার্জার ইত্যাদি নিয়ে রওনা হলাম।
সত্যি কিন্তু একটা ভিন্ন স্বাদের  ভ্যাকেশন !

"মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মা কে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে ........."


ট্রেনে বেশ খানিকটা রাস্তা, প্রায় আড়াই ঘন্টা। দুর্ভাগ্যবশতঃ  লাস্ট এক ঘন্টা আবার রেল লাইনে কাজ হচ্ছে বলে ট্রেন বন্ধ , তাই ট্রেন থেকে নেমে বাসের ব্যবস্থা। মজাই লাগলো, একটু যেন রোমাঞ্চকর । ছেলে অবশ্য মুখ গুঁজে তার হাতের মেশিন নিয়ে ব্যস্ত। মা মাঝে মাঝে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গল্প করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো। কখনো বা পুরো একটা গোটা বাক্য উত্তর কখনোবা কেবল হুঁ দিয়ে কাজ সাড়া উত্তর! মা তাতেই খুশি!
পিকনিকের মতন ব্যাগ খুলে মাঝে মাঝে চিপস বার করে খাওয়াতে অবশ্য ভুলছিলো না ছেলে ।

প্রথম হোঁচট খেলাম হোটেলের রিসেপশনে । হোটেলের মেন্ বিল্ডিং এ সুইমিং পুল আছে তবে সিটি সেন্টার এর এই ব্রাঞ্চ এ পুল নেই । আমার তো মাথায় হাত । ছেলে নিশ্চয় খুব দুঃখ পাবে, এই ভেবে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ছেলে মন দিয়ে wifi পাসওয়ার্ড নিচ্ছে । বেশি ঘাঁটালাম না । একটু দুঃখ পেলো ঠিকই তবে তেমন কিছু বড় আঘাত বলে মনে হলোনা । 
মালপত্র রেখে বন্ধুর সাথে তার বাড়ি গিয়ে সারা সন্ধে জমিয়ে আড্ডা মারলাম । Physics থেকে Philosophy --কিছুই বাদ গেলোনা। তারপর মন মাতানো রকমারি রান্না দিয়ে পেট পুজো সারলাম ।


পরের দিন আসল ভ্যাকেশন ফিলিং । সকাল সকাল হোটেল এ জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম শহর দেখতে । খুব সুন্দর সাজানো সিটি সেন্টার । ছোট ছোট দোকান, সুন্দর চার্চ , পাশে ক্যানাল , তাতে নৌকো, ...ছবির মতন । দিশাহীন ভাবে হেঁটে বেড়াতে খুব ভালো লাগলো। ১৩ বছরের ছেলের অবশ্য একটু ঘুরে পা টনটন শুরু হয়ে গেলো। শান্তি বজায় রাখতে উঠে পড়লাম নৌকায়, সাথে লাঞ্চ এ পিজা খাওয়াবার প্রতিশ্রুতি। রোদ ঝলমল দিন, ফুরফুরে হাওয়া , হাতে ক্যামেরা  ....দারুন রিলাক্স একটা ভাব। পাশে তাকিয়ে দেখলাম ছোট কর্তার মুখ চোখ ভীষণ ব্যাজার --এমন ভাবখানা যেন নৌকো ভ্রমণের মতন বিরক্তিকর কাজ আর দুটো হয়না ।
চোখাচোখি হতে বললো, "বোর হচ্ছি"..
এই জেনারেশন আবার খুব সহজেই বোর হয়ে যায়!!
একটু কথোপকথনের শুরু করার ইচ্ছে নিয়ে বললাম , 'দ্যাখ দ্যাখ ওই ব্রিজটা কি সুন্দর"...
উত্তর এলো,  "exactly same ব্রিজ একটা Den Haag এও আছে"
দমে যাবার পাত্রী আমি নই। ..
বললাম, "same নয়. তবে হয়তো similar "
চালাক ছেলে, দেখলো মা এর এই মুড বজায় রাখার জন্য চুপ থাকাই  ভালো।....
;-)
নৌকো বিহার সেরে খুঁজে পেতে ঢুকলাম গিয়ে এক ইতালীয় রেস্তোরাঁয়। ....দুজনের পেটেই তখন ছুঁচোদের কীর্তন শুরু হয়েছে । ফুটবল ফিল্ডের মতন সাইজের পিজা এসে গেলো। খুশিমনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম দুজনে । পেটে  খাদ্য ঢুকলো, আমাদের গল্প ও শুরু হলো । নানা রকমের টপিক। লাইফ আর বোরিং রইলো না, খাদ্য রসিকরা জমিয়ে খেলো। বন্ধুর মতন শেয়ার হলো অনেক গল্প ।


এরপর আরো কিছুক্ষন ঘুরে বেড়াবার ইন্ধন পেটে নিয়ে আমরা আবার হাঁটলাম।



"মা এই মিউজিয়াম তা দেখতে চাই"
ঠিক শুনছি তো? কি বললে?
"মিউজিয়াম তা মনে হয় ইন্টারেস্টিং হবে, লেখা আছে "Welcome Modern Man "..

পুত্রের এহেন অনুরোধ এ যারপরনাই খুশি হয়ে মাতৃজননী তৎক্ষণাৎ টিকিট কেটে ভেতরে।....
এক্ষেত্রে ভেতরে ঢুকে অবশ্য মাতৃজননী একটু নিরাশ হলেন। ওই মডার্ন আর্ট ব্যাপারটা আবার আমি ঠিক ভালো বুঝিনা । এখনো পাহাড় নদী সূর্য ফুল , এইসব দেখতেই ভালো লাগে ।যীশুখ্রিষ্টর পেটের ভেতর থেকে একটা কঙ্কালের হাত বেরিয়ে আছে,  কিংবা জলপ্রপাতের সামনে একটি মৎসকন্যা  একটা কাঁটা গাছ কোলে নিয়ে বসে আছে....এই ধরণের আর্ট আমার মাথা কিংবা হৃদয় কেউই বোঝে না ! 
ফলে ব্যাজার মুখে বেরিয়ে এলাম।
নাহ , এবার একটা কফি খেতেই হচ্ছে। ..

ক্যানালের ধারে বসে লোকজন দেখতে দেখতে কফি খেলাম। বিকেলে আবার বান্ধবীর সাথে আড্ডা আর Thai রেস্তোরায় খাওয়াদাওয়া।
Total chill !!!

শনিবার বাড়ি ফেরার পালা।..
ট্রেনে উঠে বললাম, "বেশ কাটলো, তাই না? তোমার কি ভালো লাগলো সব থেকে বেশি?"

"Groningen এ বেস্ট লাগলো. .....হোটেলের wi -fi টা !! দারুন strong ছিল!"

বোঝো ঠেলা!  সত্যি "ভিন্ন স্বাদের ভ্যাকেশন ".......................
;-)


Saturday 5 May 2018

M&M:মিটিং ও ম্যানেজার!


Dilbert ভায়া কি আর এমনি এমনি পপুলার?
;-)



টিম মিটিং এ বোঝাই দেখি আমার ক্যালেন্ডার,
জীবনখানা বিষিয়ে দিলে, মিটিং ও ম্যানেজার!

চলবে মিটিং এক ঘন্টা, কুঁচকে কপাল ভুরু,
চশমা এঁটে, ব্যাজার মুখে, মিটিং হলো  শুরু !

মুখের ভূগোল এমন কঠিন, লক্ষী মায়ের প্যাঁচা,
রামগরুড়ের মাসতুতো ভাই, এমনি ব্যাটা খেঁচা!

এদিকে ওদিক তাকিয়ে ভাবি, এ কি শুধুই আমি?
কাজের নামে কেবল মিটিং, রাজ্যের ভণ্ডামি?

দিবারাত্র মিটিং মিটিং, করবো কখন কাজ?
পান থেকে চুন খসলে পরে মাথায় তেনার বাজ!

ভালো করে চেয়ে দেখি, সবার একই দশা,
কফির কাপে মুখ লুকিয়ে , চুপটি করে বসা!

মাথা নিচু, কেউ বা দেখি ঢুলছে আপন মনে,
চশমা চোখে বিজ্ঞ ভাবে বসে ঘরের কোনে !

কেউবা দেখি শিল্পী মানুষ আঁকছে পাহাড় নদী,
এইভাবেই খানিক সময় কাটানো যায় যদি !

কেউ খেলছে নিজের সাথেই খাতায় কাটাকুটি,
কেউ আঁকছে বস বাবাজির মাথায় রঙিন ঝুঁটি!

আলপনাতে কেউবা ভরায় বসে মিটিং খাতা,
কেউবা নোটস নিতেই থাকে, পাতার পর পাতা !

হঠাৎ দেখি কেউবা যেন উঠলো নড়ে জেগে,
নিজের কাজের ঢাক পেটালো, প্রবল ঝড়ের বেগে!

কেউবা তাতে করলো চ্যালেঞ্জ, চড়িয়ে উঁচু গলা,
দশটা কথা বললো বেকার, যা দু-শব্দে যায় বলা!

মিষ্টি হেসে বসের মাথায় ঢাললো বা কেউ তেল,
পিঠচাপড়ে, ল্যাংড়া বলে দিলো বেচে বেল!

কেউ তাকায় ঘড়ির দিকে সেকেন্ডে দশ বার,
করলে এমন ঘড়ির কাঁটা ছুটবে আশা তার!

কেউবা বসে লিখছে ছড়া , গেলই ভারী বয়ে,
ছন্দ যখন আসে, সে কি আসে বলে কয়ে?

মুখে চোখে তবু সবার ভাবখানা রাশভারী,
সমস্যা World  Hunger, যেন হচ্ছে মিটিং তারই !

যতই করি ছন্দ ছড়া, মিটিং নিয়ে মজা,
মাসের শুরু মাইনে হাতে, এক্কেবারে রাজা!,

বরং কুঁচকে ভুরু মনোযোগের করি অভিনয়,
পেটের দায়ে জোরসে বলি, M & M এর জয়!




cartooncourtsey: focusadventure.in


Thursday 26 April 2018

বহুরুপি

















আমি নাকি মাঝে মাঝে
দুষ্টু ছেলে বড়,
আবার মাঝে মাঝে মিষ্টি হাসি
লজ্জা জড়সড়|
কখনোবা রেগে আগুন
জেদে ছিঁড়ি চুল,
বসে থাকি গোমড়া মুখো
যদিও জানি ভুল।
কখনোবা ফোয়ারা হাসির,
কারণ নেইকো জানা,
লুটোপুটি খিলখিয়ে 
আহ্লাদে
 আটখানা।
কখনোবা ছিঁচকাঁদুনে
দুচোখ করি লাল,
কিংবা ভীষণ অভিমানে
ফুলিয়ে থাকি গাল।
কখনো বা উদাস চোখে 
স্বপ্ন বিভোর হই,
খাটের তলায় লুকিয়ে বলি 
বলোতো আমি কই ? 
কখনোবা ভালো ছেলে 
মায়ের কোলে বসা,
কখনো ছুটি দিশেহারা 
পাগল করা দশা !!
 মা কে বলি ,"এত রূপের
কোনটা তোমার প্রিয়?"
মা বলে, "বহুরুপি ছেলে আমার  
সব রূপ-ই অতুলনীয় " !!!