Wednesday 30 March 2016

ঘোর "কোহলি" -র সন্ধ্যা -১













ক্রিকেট পাগল জনতা দেখো উল্লাসে আত্মহারা
জিতেছে ভারত, আনন্দে তাই উঠলো মেতে পাড়া !

পিটিয়ে ছাতু করলো কেমন কোহলি এবং ধোনি
এরা দেশের রত্ন ওগো, মোদের চোখের মনি!!

কর্তা নাচেন, গিন্নি নাচেন, কোহলি প্রেমে পাগল 
আজ ডিনারে থাকবে প্লেটে কষা নধর ছাগল!

ক্রিকেট পুজো সবার সেরা, ভোলায় ব্যথা সকল,
Intolerance মিছিল-টিছিল বড্ড গেছে ধকল !

জমিয়ে এখন বসবে সবাই TV -র সেটটা খুলে।
কানহাইয়ার বক্তৃতা সব গেলেই বুঝি ভুলে?

"যাট" ভাইরা হই হই করে করছে কোটার দাবি,
ক্রিকেট বলে ব্রেক নিয়েছে, তাই তো বসে ভাবি!

পার্লামেন্টও  ঝিমিয়ে কেমন কেউ দেয় না গালি,
সবাই যেন খুশ্ মেজাজে, কেউ ছোঁড়ে না কালি !

মাল্য সাহেব উধাও হলেন হজম কোটি কোটি,
Kingও গেল, Fishও গেল, জুটবে না আর রোটি !

জ্বলছে দেখো দুনিয়া পুরো ব্রাসেলস কিম্বা লাহোর, 
কে মরছে, কে মারছে, যায়না করা ঠাহর!

এরই মাঝে কোহলি যখন কষিয়ে মারে ছয়,
সব ভুলে মন নেচে ওঠে, জয় ক্রিকেটের জয়!

ক্রিকেট ফিভার চললে পরে শান্তি থাকে দেশে,
দেশের সবাই "এক" হয়ে যায়  ক্রিকেট ভালোবেসে!



Title: Joydeep Mukherjee




Monday 7 March 2016

Happy শিবরাত্রি! Happy Valentines Day! Double Trouble!

photo credits  :pinterest 


বাবা:   প্রিয় ভক্তবৃন্দ, Happy শিবরাত্রি! আজকাল সব কিছুতেই দেখছি 'হ্যাপি' লাগিয়ে সবাই wish করে । মন্দ লাগে না। কেমন যেন জন্মদিন জন্মদিন ভাব একটা। ফেসবুক এ আলোড়ন । আমার মাথায় জল-দুধ ঢালতে ঢালতে তোলা অজস্র selfie এবং তাতে অজস্র like! 
এবার আবার Double Trouble !পাঁজি তিথি অনুযায়ী আবার Valentines Day-র লগ্ন ও  লেগে যাচ্ছে !
খুব চাপ । 
একটু stressed ফিল করছি!
কালকেই তো এক ভক্ত চোখ বুজে প্রণাম করে বলছিলো, 
"বাবা সারাদিন উপোষ করে শিবরাত্রি পালন করবো, বিকেলে কিন্তু ভালো একটা Valentine চাই!" বোঝো ঠেলা! বলি আমাদেরও তো তথাস্তু বলার কিছু limitations আছে !...

তবে এবার আমার একটা অনুরোধ আছে । আমার মাথায় তোরা দুধ ঢালা বন্ধ কর । শুধু জল ঢাল, আপত্তি নেই। এই গরমে দুবারের জায়গায় দশ বার স্নান করতে মন্দ লাগে না। তবে দুধটা বন্ধ করলে ভালো হয়।
আহা রাগ করিসনে, বারণ করার কারণ আছে ।


১. আগে অল্প বয়স ছিল..high  fat, low fat, mother diary, milk powder, সব হজম হয়ে যেত। এখন বয়স হচ্ছে, বড় গ্যাস হয়। Soya মিল্কটাই একটু যা সহ্য হয় পেটে।
২. একে জটা বলে গৃহিণীর রেগুলার গজগজ, তাতে দুধ ঢুকে যখন চ্যাটচ্যাট করে, দাম্পত্য কলহ অনিবার্য!। তোদের মায়ের রাগ তো জানিস, পান থেকে চুন খসলেই ত্রিশূল নিয়ে তাড়া করে । পরের দিন চ্যাটচ্যাট এ চুলে শ্যাম্পু করে দিতে গিয়ে বড্ড বকাবকি করে।বিয়ের পরপর এই বকাবকি মিষ্টি লাগতো, আজকাল যেন একটু বেসুরো ঠেকে। 
আর বকাবকি তো জটাতেই থামে না। চলতে থাকে। .
.....কি করে যে সব মেয়েগুলো তোমার মতন বর চায় , তাও আবার উপোষ করে... আমার মাথায় ঢোকে না! যে ঘর করে সেই বোঝে কি জিনিস।..
...ঘরের একটা কাজে হেলপ পাইনা, আর পাবোই বা কি করে? ঘরে থাকলে তো তবে হেল্প। .. 
....কত বলি ওই নন্দীভৃঙ্গী তোমার মাথা খাচ্ছে, তা কে কার কথা শোনে ?
....আর ওই বাঘছাল ফ্যাশন তো অনেক হলো, সময়ের সাথে সাথে একটু বদলাতে হবে তো !! অসুর  পর্যন্ত আজকাল সুন্দর সুন্দর ধুতি পরে!
ইত্যাদি ইত্যাদি ...
৩. তাছাড়া, এইভাবে দুধ ঢাললে "স্বচ্ছ ভারত" হবে কি করে? দুধ, ফল, ফুল,মিষ্টি --  মিলে মিশে একাকার যে....কে পরিষ্কার করবে?
আমার মাথায় ঢেলে নষ্ট না করে বরং নিজেরা খা, অনেক কাজে দেবে। সময় মতন পেটে দুধ ঘি পড়লে পরে ডাক্তার এর বিল দিতে দিতে দেউলিয়া হতে হবে না ।
দুধ ফল না ঢাললেও আমি তোদের ভালোবাসি!
-----বরং আমার মাথায় ঢালার দুধটা একটা গরিব বাচ্ছাকে ডেকে খাওয়া। ওটাই আসল ভক্তি ! সাথে দুটো সন্দেশ ও দিস। 

ওর মিষ্টি হাসিতেই আমার আশীর্ব্বাদ জানবি !

যাই,  Oh!Kailash -এ  আজ dinner-for-two বুক করেছি । 💕
দাম্পত্য কলহ যতই হোক না কেন........😍

তবে হ্যাঁ ,  ওই ডিনারে কলা-সন্দেশ দিয়ে সাবু মাখাটা বন্ধ করিস না -ওইটি আমার বড় প্রিয়। ফিরে এসে খাবো । Valentines day বলে আবার আমার পাতে যেন কেক পেস্ট্রি না দেখি!! তোদের  মা জিগ্গেস করলে বলবি "diet সন্দেশ দিয়ে মেখেছি", নয়তো আবার বকা খাব। সামান্য cholesterol ধরা পড়েছে কিনা!

Happy Shivratri once again !! and Happy Valentine's day!!
;-)


Saturday 5 March 2016

কলম কালি দোয়াত



ছোট্টবেলা থেকে পেন, পেন্সিল, রাবার ইত্যাদি যাবতীয় stationary  আমার খুবই প্রিয়। তবে সব থেকে প্রিয় পেন। সব রকমের -- লাল, নীল ,কালি, ডট  ... সব সব। পকেটে একটু পয়সা এলেই পেন কিনতাম । কেউ কিছু দিতে চাইলেই পেন চাইতাম । বই এর দোকানে গেলে জুলজুল করে তাকিয়ে থাকতাম পেনগুলোর দিকে ।
ওরা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতো । এর জন্য কম বকা খেয়েছি?
কোনো কাকু হয়ত বাবার সাথে দেখা করতে এসেছেন কাজে ।  কাকুর বুক পকেট থেকে  পেনটা উঁকি ঝুঁকি মারত, আমাকে ডাকত। আমি নির্লজ্জর মতন দেখতে চাইতাম পেনটা। হাতে পেয়ে এক টুকরো কাগজ এ একটু লিখে তবে শান্তি পেতাম। বুঝতে পারতাম মা পেছনে চোখ বড় করছে কিন্তু এ এক অদ্ভূত হাতছানি  ...বোঝাতে পারব না ।

ক্লাস ফোরে পেন্সিল ছেড়ে কালি পেন এ লিখতে বলল স্কুল থেকে । মনে পড়ে একটা অদ্ভূত বড় হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়েছিল। পেন এলো, সাথে এলো কালির দোয়াত। প্রথম দিকে মনে পরে দোয়াতের ঢাকনায়  কালি ঢেলে তারপর খুব সাবধানে পেনে কালি ভরতাম । কিছুদিন পরে বাবা একটা সাদা ড্রপার এনে দিলো ।ওটা দিয়ে কালি ভরা খুব সহজ হয়ে  গেল। টেবিল, টেবিল ক্লথ আর মা  --  সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

আমার অজস্র পেন এর কালেকসন থেকে রোজ নিত্যনতুন পেন বার করে লিখতাম । কখনো কিছু না লেখার থাকলেও পেনগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম। কোনোটায় কালি ভরতাম, কোনোটায় নিব বদলাতাম, কোনোটা মুছে রাখতাম   ....ভিষণ ভালবাসতাম ।
মনে পড়ে সেই কালি মোছার কাপড়টা? একেবারে মডার্ন আর্ট !
মনে পড়ে ডট পেনের রিফিল খালি হলে কেমন রিফিলের পেছনে জোরে ফু দিলে আরো একটু লেখা যেতো?
মনে পরে দুই হাতের তালুতে রিফিল্টা ঘষে নিলে কেমন আরেকটুখন চলতো রিফিলটা ?
মনে পরে পরীক্ষার আগের দিন সব পেনগুলোতে কালি ভরার কথা? 
মনে পড়ে যখন চার রংওয়ালা  ডট পেন বেড়োলো? একই পেন দিয়ে লাল নীল কালো সবুজ লেখা।
উফ কি excitement !!
.. হাতে iphone  পেয়ে অত excitement হয়েছিল কিনা সন্দেহ ।

তারপর শখ হলো একটা চাইনিস ফাউন্টেন পেনের।তার আবার নিজস্ব্ ড্রপার লাগানো। সে এক দারুন ব্যাপার।কিন্তু পেনগুলোর খুব দাম। ক্লাস নাইন এ মা প্রথম কিনে দিল একটা। কি যে যত্ন তার ! কোথায় যে তাকে রাখব ভেবে পেতাম না...পেন্সিলবক্স এর অন্যান্য 'সাধারণ' পেনগুলোর  সাথে রাখা কি ঠিক হবে? 
পরের ভাইফোঁটাতে আবার লাভ হলো ওই পেন....আহ্লাদে আমি ষোলখানা (আটখানা x ২)!!

যখন বেনারস পড়তে গেলাম, তখন প্রত্যেক মাসের খরচা বাবদ হাতে একটা ফিক্সড টাকা আসত বাবা-মার থেকে। । এর থেকেই মেসের খাওয়াদাওয়া, অল্প বিস্তর বাজার, দুএক খানা সিনেমা দেখা, গঙ্গার ঘাটে মাঝে সাঝে বোটিং, পরীক্ষার আগে বাবা বিশ্বনাথকে পুজো দেওয়া। ..এইসব হতো । আমার আবার তার থেকে অল্প টাকা বাঁচিয়ে দু একখানা পেন কেনার বাতিক ছিল।
হোস্টেলে থাকাকালীন এক life long বন্ধু হলো "সু"। সে আমার পেনের প্রতি এই মোহ দেখে নিজের মাসকাবারি টাকা থেকে প্রত্যেক মাসের এক তারিখে একটা করে পেন কিনে দিতে শুরু করলো।আরেক অদ্ভূত আনন্দ - অপেক্ষা করে থাকতাম মাসের পয়লা-র জন্য। কোনদিন ভুলতো না "সু"!

এরপর পড়াশোনার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলাম জাপান।জাপান যেন কলম-প্রেমিকদের স্বর্গ !! কি যে সুন্দর সুন্দর পেন। আমি তো এক কথায় পাগল হয়ে যেতাম পেনের দোকানে গেলে।যেমন সুন্দর দেখতে, তেমনি সুন্দর লেখে। স্কলারশিপের পয়সা পেনের দোকানে খরচা করতে বেশ লাগত। ..এছাড়া প্রত্যেক মাসের এক তারিখে  "সু" এর নাম করে নিজেকে একটা পেন কিনে দিতাম।
কত লিখতাম তখন। পাতার পর পাতা চিঠি লিখতাম।নিজে মুখেই বলছি, হাতের লেখা আমার বেশ ভালো ছিল এক কালে।সমস্ত স্কুল মিলে হাতের লেখায় ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছিলাম একবার।এখন স্বপ্ন মনে হয় ।
বিয়ের পর কর্তা ও এমনি হিরে-জহরত-চাইনা-পেন-চাই বউ পেয়ে খুশি হয়ে মাঝে মাঝেই সুন্দর সুন্দর পেন কিনে দিতো।
;-)
এরপর এলো কম্পিউটার এর যুগ । লেখালেখি কমতে লাগলো ।কম্পিউটার এর কিবোর্ডে টকাটক টাইপ করে 'লেখা' শুরু হলো ।ঝকঝকে লেখা ঠিকই তবে কোনো character নেই। হাজার  রকম ফন্ট থেকে বেছে নেওয়া যায় পছন্দ মতন 'হাতের লেখা' কিন্তু কি যেন missing !কোথায় যেন একটা পার্সোনাল টাচের অভাব।
সারাদিনে অনেক কিছু লিখি। প্রচুর ইমেইল লিখি, ব্লগ লিখি, বাজারের লিস্ট লিখি, ফেস বুকে স্টেটাস লিখি ,...আরো কত কিছু লিখি।..কিন্তু সত্তি যেন কিছুই লিখি না। টকাটক টাইপ করতে করতে হাতের লেখাটাও কবে হারিয়ে গেছে।
আজকাল কখনো পেন দিয়ে কিছু লিখলে, কি লিখেছি সেটা বুঝতে নাজেহাল হয়ে যাই...
কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং!! 

---পেনগুলো ও যেন কেমন অভিমান করে আসতে আসতে সরে গেল আমার জীবন থেকে।কেউ ভেঙ্গে গেল, কেউ হারিয়ে গেলো, কারুর কালি শুকিয়ে গেলো। ...আসলে এত ভালবাসা থেকে এত অবহেলা ওদের সহ্য হলো না ।

~*~*~*~*~
২০১৫। অনেক বছর বাদের কলেজ reunion ।
আমরা কজন সেই "life long" বন্ধুরা আবার একসাথে হলাম। কেমন আনন্দ হলো সেটা লিখে বোঝাতে পারব না । ঠিক যেন সেই পুরনো দিনগুলো ফিরে পাওয়া।হাহা হিহি । একে অপরের জন্য নানা রকম উপহার । 
সব উপহারের শেষে "সু" ব্যাগ থেকে একটা পেন বার করে দিলো । 

"দয়িতা , তোর এই মাসের পেনটা ".....

মনটা কেমন আনন্দে নেচে উঠলো ! জেগে উঠলো সেই সুপ্ত পেন-প্রেম । 
কিন্তু তার থেকেও অনেক বড় পাওয়া এই মিষ্টি মনে রাখা.....
"life long "!!!!



photo: www.fountainpennetwork.com