সবজিটা আমার কোনোদিনই ভালো লাগতো না । যেমন বাজে গন্ধ তেমনি বাজে খেতে। তবে সেটা এতো জোর গলায় সারা বিশ্বকে জানিয়ে বলার সাহস ছিল না । বিশ্ব তো ভুলে যাও, বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে বলার ও তেমন সুযোগ ছিল না। কড়া নিয়ম ছিল থালায় যা দেওয়া হবে সব খেয়ে নিতে হবে, ব্যাস। ফুলস্টপ! no discussion.
নইলে সেই বড় বড় চোখ, ভাবলে আজও হাঁটু কাঁপে,গলা শুকিয়ে আসে !
ফলে সারা জীবন সুড়সুড় করে কুমড়ো খেয়ে নিয়েছি। চুপচাপ ।
কুমড়োর ছেঁচকি, কুমড়োর ছক্কা, কুমড়ো ভাতে, কুমড়োর চাটনি!
কি সব গ্ল্যামারহীন রেসিপি।
তাই খেয়েছি, নির্বিবাদে।বছরের পর বছর ।
তবে আজ বলতে দ্বিধা নেই এইসব অত্যন্ত বাজে শাক সবজির মর্ম বুঝেছি বাড়ি ছাড়ার পরে ।
বেনারস এর হোস্টেলে যখন নেনুয়ার ঝোল আর ভাত খেতে দিতো তখন মনে হতো, আহা মা কুমড়ো ছেঁচকিটা বড় ভালো বানায় !
জাপানের কলেজ ক্যান্টিনে যখন সামুদ্রিক শ্যাওলা মুড়ে একটা চিকেন দিতো (আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে, শ্যাওলা নয়, seaweed !), তখন ওই কুমড়ো ছক্কার জন্য মন কেঁদে উঠতো!
হল্যান্ড এ ছোট্টবাচ্চা নিয়ে হিমশিম খেতে খেতে যখন রান্না করতাম, ভাবতাম এইসময় কেউ যদি একটু আলুকুমড়ো দিয়ে ভাতেভাত বানিয়ে দিতো!
কুমড়ো থাকতে কি আর আমরা কুমড়োর মর্ম বুঝি?
তাই (অনেক বছর পরে) আজকাল আমার কুমড়ো ভালোই লাগে!
ছক্কার রেসিপি ইন্টারনেট এ দেখে রান্নাও করেছি। পয়সা খরচ করে ISD তে মা কে জিজ্ঞেস করে জেনেছি কুমড়ো ছেঁচকির কথা। বানিয়েওছি কতবার। তাই দিয়ে এক থালা ভাত ও মেখে খেয়েছি খুশি মনে !আবার বড়াই করে তাই নিয়ে ব্লগ ও লিখেছি!
[হা কপাল কি দিনকাল পড়লো!, সেই anti-কুমড়ো আমি কিনা আজ ....]
তবে যাই বলি না কেন, ইয়ে মানে ....ওই আর কি .. কুমড়ো কুমড়োই ......
এমনি এমনি তো আর সুকুমার রায় কুমড়োপটাশ নিয়ে ছড়া লেখেননি !!!
" (যদি) কুম্ড়োপটাশ ডাকে—
সবাই যেন শাম্লা এঁটে গামলা চড়ে থাকে;
ছেঁচকি শাকের ঘন্ট বেটে মাথায় মলম মাখে;
শক্ত ইঁটের তপ্ত ঝামা ঘষতে থাকে নাকে! "
বিদেশে এসে দেখি ওমা এখানে কুমড়োর লাইফই আলাদা । ঠাট-বাট একদম অন্যরকম ।
বিনস, গাজর, বিট, ব্রকলির মতন সফিস্টিকেটেড সবজিদের সাথে ওঠা বসা !
ক্রিমের মতন অভিজাত উপকরণের সাথে মিলে মিশে সুপ বানানো !
কিশমিশ, কাজু , পেস্তার সাথে হাত ধরাধরি করে কেক!
ভুরভুরে ভ্যানিলা এসেন্স গায়ে লাগিয়ে পুডিং!
আরো শোনো !
কুমড়ো দিয়ে পাস্তা পর্যন্ত!
(মরে যাই)
তারওপর এই হ্যালোউইন এর সময় যা করা হয়, সেটা যেন একেবারে বাড়াবাড়ি!
একটা গোটা ইভেন্ট কুমড়ো নিয়ে মাতামাতি, তার চোখ কান নাক এঁকে তাকে মাথায় চড়ানো । তার মধ্যে আলো জ্বালিয়ে......
আদিখ্যেতা!
যাগ্গে, ফ্রিজ এ কুমড়ো ছিল, বার করে রান্না করতে গিয়ে শুনি।.
(আমি তো আবার ওদের কথা শুনতে পাই).....
ঠিক যতটা ভাব ভেবেছিলাম ওদের মধ্যে ততটা নয়.....
কুমড়োর চেহারা নিয়ে টিটকিরি এখানেও চলে। ......
বিন্স :
আমার চেহারা দেখ লম্বা দোহারা,
যারা দেখে, চটপট প্রেমে পড়ে তারা !
গাজর:
আমার রূপ গুন ভিটামিনে ঠাসা !
সুপে আমি সুস্বাদু,হালুয়াতে খাসা !
বিট:
জগৎ ফিদা মোর রঙের বাহার,
স্টু এ আমি অনবদ্য, রুগীর আহার!
ফুলকপি:
ফুটফুটে ফুল আমি, ডালনা কি ভাজা
পছন্দ সবার আমি, সব সবজির রাজা !
হঠাৎ দেখি কুমড়ো যেন জেগে উঠলো .........
তোরা বড্ড বেশি রিয়েল, পুষ্টি ভিটামিন,
আমি থাকি রূপকথায়, কিংবা Halloween !
তোরা থাকিস প্লেটে, রোজের খাওয়াদাওয়া,
আমি রথ রাজকন্যের, কল্পনাতে পাওয়া !
মজার আমি, তাই তো লেখেন ছড়া সুকুমার,
তোদের নেই ট্যালেন্ট, কবির ভাব জাগাবার !!
পাশে বসে ব্রকলি শুনছিলো । বললো,
"Can you explain all that in English please? I just do not understand the gibberish that you just said Mr. Pumpo!"
কুমড়ো একবার বাকিদের দিকে তাকালো। গড়িয়ে একটু এগিয়ে গেলো ।তারপর confidently ঝরঝরে ইংরিজিতে বললো,
I am in fairy tales, me the fat pumpkin,
I am the carriage that Cinderella was in!
I am bright orange, favourite of your queen,
I get to light up the evening of Halloween!
সব সবজি কাচুমাচু মুখে সরে পড়লো।
Halloween এর সময় , সত্যি কুমড়োর কনফিডেন্স অন্য লেভেলে!!
আমিও সরে পড়লাম ।
যাই কুমড়ো কেকের রেসিপি দেখি । Halloween এ ঠিক কুমড়ো ছেঁচকি জমবে না !
;-)