শুধু পড়া আর পড়া .....
পরীক্ষার জন্য পড়া!!.
ভারতবর্ষে ৭টি ঋতু :
শীত, বসন্ত, গ্রীস্ম,হেমন্ত, বর্ষা, শরৎ এবং পরীক্ষা !
ফেব্রুয়ারী-মার্চ পরীক্ষা কাল। একটা নতুন আবহাওয়া। তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি (units not important), চাপ অতিরিক্ত, চোখে ঘুমের আদ্রতা ১০০%,পরিবারে গাম্ভীর্য ১০০%, ঘন গম্ভীর মেঘের মতন মুখচোখ, কোয়েশ্চন কমন না পেলে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা, রেজাল্ট খারাপ হলে নিম্নচাপ এবং কালবৈশাখীর আশংকা। যখন তখন দমকা বকা খাওয়ার সম্ভাবনা। সূর্যোদয়/সূর্যাস্ত দেখার সময় নেই....
ভবিষৎ তৈরির নামে এই ঋতু ছাত্র ছাত্রীদের শৈশবের চরম বলিদান !
সবাই পড়ছে । TV বন্ধ, রাস্তায় ক্রিকেট বন্ধ, মাঠে ফুটবল বন্ধ, বাড়িতে হাসির আওয়াজ সীমিত! মায়েদের উপোষ বেড়ে গেছে , বাবাদের টেনশান ।
ঠাকুর দেবতারাও প্রচন্ড চিন্তিত। ভক্তরা কেউ অংকে ১০০ চাইছে, কেউ ইতিহাসে পাস মার্ক্স্ ।
"জয় বাবা বিশ্বনাথ , ছেলেটাকে পাস করিয়ে দিও বাবা , খালি পায়ে হেঁটে তোমার মাথায় জল ঢালতে যাবো, মন্দিরে ১০১ টাকার পেড়া চড়াবো "
বাবা বিশ্বনাথ পড়েছেন মহা ফাঁপড়ে , এদিকে কাজ হাসিল করে পেড়া খাবার ইচ্ছে , ওদিকে গিন্নি দুগ্গার বকা "পেড়া খেয়ে খেয়ে সুগারটা যে বাড়ছে!!"
রাত দিন জেগে পড়া তৈরী। কোথাও গত ১০ বছরের পেপার সল্ভ, কোথাও অভিজ্ঞ টিচারদের বানানো মডেল টেস্ট পেপার। এরপরেও কোয়েশ্চেন 'কমণ না পেলে রাগ হবারই কথা!
পরীক্ষার দিনটি তো যেন যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি!
ঠাকুরকে প্রণাম, গুরুজনদের প্রণাম, খাবার টেবিলে বই খাতা ছড়ানো, তারই মাঝে দু গরস ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়া ....
ডিম্ খাওয়া বারণ কারণ ডিম যে গোল ! গোল জিনিস খেয়ে বেরোলে পাচ্ছে শূন্য (গোল) পাও!!!
পরীক্ষার হলের বাইরে শরবৎ আর টিফিন হাতে বাবামাদের ভিড় ।
ঠিক হল এ ঢোকার আগের মুহূর্ত অবধি বই এর পাতায় চোখ আর লাস্ট মিনিট ইন্সট্রাক্সান .......
বার বার চেক করবে কিন্তু!
তাড়াহুড়ো করবে না। ..
Neatly লিখবে।
Break এর সময় লস্সিটা খেয়ে নেবে। .
কোনো প্রশ্ন না পারলে ওটা ছেড়ে পরেরটায় চলে যাবে, সময় নষ্ট করবে না...
ছাত্র ছাত্রীরা কেবল পড়ছে। পরীক্ষায় পাস করতে হবে, ভালো নম্বর পেতে হবে।
ফোকাস ফোকাস .....
যেদিন জয়েন্ট এন্ট্রান্স এ চান্স পেলাম না...(মানে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া কপালে হলো না),,,সেদিন কিন্তু খুব মুষড়ে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল জীবনের এই শেষ। এগোনোর সব রাস্তা বন্ধ । নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুঝি স্বপ্নই রয়ে গেলো। একদম খাটিনি, তা নয়। তবে চিরকাল ফাঁকিবাজ ছাত্রী ছিলাম, তাই হয়তো যে পরিশ্রম দরকার তা করিনি ..ফলে চান্স ও পাই নি...fair enough !
পরে অন্যান্ন অনেক দরজা খুলে গেছিলো বলে আজ হয়তো সেইদিনের ক্ষোভ বা দুঃখ আর নেই। "নিজের পায়ে দাঁড়ানো" কথাটার কি মানে সেইটাও বুঝতে সময় লেগেছিলো বইকি। আসলে যেই সময়টা বড় হয়েছি সেই সময় জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল .....ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ।ঠিক নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কিছু ভাবার সুযোগ ছিল না, এতো exposure ও ছিল না, এতো সাবজেক্ট ও ছিল না।
কথায় কথায় Google কাকুও ছিল না সব উত্তর নিয়ে হাতের নাগালের মধ্যে।
হয়তো জীবন অনেক সহজ ছিল । কপালে দই এর ফোঁটা আর পেন্সিল বাক্সতে কাগজে মোড়ানো ঠাকুরের ফুল ছিল চরম শক্তিশালী দুই অস্ত্র ।খাতা জমা দেবার আগে একবার অবশ্যই সেই মোড়ক খাতায় বোলাতাম । বিশ্বাস এমন জিনিস যে মনে হতো ভুল উত্তরগুলো যেন ঠিক হয়ে যাবে।
বয়সের সাথে সাথে বেড়েছে অভিজ্ঞতা ।
বুঝতে পেরেছি জীবনে আসল পরীক্ষা কোনগুলো! বুঝেছি জীবনের সব পরীক্ষাই মোটামুটি সিলেবাসের বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র। মডেল টেস্ট পেপার বলে কিছু নেই। তাই কিছু পরীক্ষায় পাস্ করেছি, কিছুতে ডাহা ফেল করেছি। যিনি প্রশ্নপত্র সেট করেন তিনি নিজের মর্জির মালিক, কোনো moderation এর ধার ধারেন না। রেগে মেগে যে re -exam এর চাহিদা করবো, তাও শোনেন না ।
পরীক্ষা একবারই হবে!! পাস্ করলে পাস্, ফেল করলে ফেল।
দিনকাল পাল্টেছে ঠিকই। তবে যেটা বদলায়নি সেটা হলো মা বাবাদের চিন্তা।
আজ নিজেরা মা বাবার জায়গায়। নিজেরা পরীক্ষা দেওয়া আর ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা,সম্পূর্ণ আলাদা অনুভূতি।
পরীক্ষার সময় ভোরবেলা অ্যালার্ম বাজতো ৪ টের সময়। অন্ধকারে হাঁতড়ে হাঁতড়ে অফ করে দিতাম। ৫ মিনিটের মধ্যে মা এর গলা পাশের ঘর থেকে " কিরে উঠলি ?"
আমিও আজ ছেলেকে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠালাম, বললাম "French টা আরেকবার revision করে নাও"!
কার পরীক্ষা বোঝা মুশকিল।
মা বাবারা আজও ঠিক সেইভাবে খেটে চলেছে ছেলেমেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড় করাবার অভিপ্রায়ে ।
তবে আমাদের আবার আরেক চ্যালেঞ্জ!
নতুন প্রজন্ম আবার মোটামুটি সব জানে।
এদের ধৈর্য অতি স্বল্প, জানার কৌতূহল আরো সীমিত, হাতে সময় প্রায় নেই বললেই চলে।
বাবা মার থেকে বেশি ভরসা Google এর ওপর।
;-)
History datesগুলো ইম্পরট্যান্ট , পড়ে নিও কিন্তু -- জানি মা, Google করে নিয়েছি ।
নতুন ফুটবল ফিল্ডটা পেট্রল পাম্প মোড় থেকে ডানদিকে -- জানি মা, Google maps দেখেছি।
রোজ সবজি ফল খাওয়া উচিত ডাক্তার বলেছে -- জানি মা, কিন্তু কোন website এ দেখেছো ?
Cycle এর বেলটা কাজ করছে না --জানি মা , You tube দেখে সারিয়ে নেবো। .
মা তো , চিন্তা হয় !
তবে এটাও জানি যে এরাও সময় মতন শিখে যাবে সব ।
ঠিক যেমন আমরা শিখেছি !
জীবনের পরীক্ষাগুলো কিন্তু একবারই হবে!! পাস্ করলে পাস্, ফেল করলে ফেল।
Google কাকু কিস্সু করতে পারবে না..........