Monday 20 August 2018

স্কিম-স্ক্যাম (Scheme-Scam)

দেশ থেকে ফিরলাম । আবার কিছু observation নিয়ে ।
😀

দেখলাম আমাদের দেশটা হয়  স্কিম কিংবা স্ক্যাম কিংবা স্কিম-স্ক্যামে চলছে !
যেখানে যা কিনতে যাই, একটা স্কিম আছে আর নিউজ খুললেই একটা স্ক্যাম আছে !
নিস্তার নেই দুটোর থেকেই   ......

যে কোনো জিনিস "Free " পেতে আমরা সবাই বড্ড ভালোবাসি। ফ্রি কিছু পাওয়ার আনন্দে আমরা মাঝে মাঝে এটাও ভুলে যাই যে সেই জিনিষটা আদপে আমাদের দরকার আছে কিনা বা আমাদের কিছু ক্ষতি করছে কিনা ! Free মানেই "good deal "!



স্কিম ১:
সেদিন টুকটাক বাজার সেরে  আমি আর কর্তা ঢুকলাম একটা রেস্টোরেন্টে ।
সুন্দর ঝকঝকে সাজানো। বাঁশি-ড্রামস যুগলবন্দীর সুর । AC -র ঠান্ডা হাওয়া । ফিটফাট উর্দি পড়া স্মার্ট লোকজন।
Relaxed !
অর্ডার দিলাম একটা বিয়ার, একটা মার্গারিটা।
ছেলেটি এক গাল হাসি নিয়ে বললো,
"ম্যাডাম, স্কিম আছে একটা। Buy two, Get one."

সত্যি বলতে কি এক মিনিটের জন্য আমিই হতবাক! এমনি স্কিম(স্ক্যাম) ও আজকাল হচ্ছে নাকি?
বললাম, " আমি দুটো pay করে একটা কেন নেবো?"
বললো: ম্যাডাম, দুটো নিলে আরেকটা ফ্রি ! Happy Hour !
বললাম, "তাহলে Buy two, get one FREE বলা উচিত না?"
মিষ্টি হেসে বললো,  "ঐটাই বলতে চাইছিলাম" ।
তারপর কর্তার দিকে তাকিয়ে বললো , "স্যার, আপনার বিয়ারেও একই স্কিম আছে "

মেনুকার্ডটা হাতে এগিয়ে দিয়ে ছেলেটি গেলো ড্রিঙ্কস আনতে ।

মেনুকার্ডে লোভনীয় সব খাবারের ছবি । আমি আর কর্তা লোলুপ দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকিয়ে কি খাবো ভাবতে লাগলাম।
খিদে যে খুব তা নয়, তবে দৃষ্টি খিদে খুব ডেঞ্জেরাস জিনিস! ছবি দেখেই জিভে জল। পারলে সব অর্ডার করি! তাছাড়া কর্তা গিন্নি দুজনেই আমরা খাদ্যরসিক, ঐসব ক্যালোরি-ফ্যালোরি তে তেমন বিশ্বাস করিনা!
(বিশ্বাস না হয় আমাদের weighing machine কে জিজ্ঞেস করুন!)

ছেলেটি এলো একটা বিয়ার  আর একটা মার্গারিটা নিয়ে । হাসি মুখ।
ততক্ষনে আমি আর কর্তা মেনুকার্ড থেকে appetizer পছন্দ করে ফেলেছি ।

"স্যার, appetizer এও  একটা স্কিম আছে। দুটো নিলে যেইটা কম দামের সেটা ফ্রি, আর তিনটে নিলে, চতুর্থটা ফ্রি "

এই রে! Massive complicated scheme !
আমি আর কর্তা  মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম।আমরা এতক্ষন ধরে যে একটা ডিসিশন নিলাম সেইটা গুবলেট হয়ে গেলো এই স্কিম  শুনে। ....Totally confused !
কটা নিলে কটা ফ্রি --এই গণিত বুঝতে এবং ভাবতে গিয়ে ঠিক কি খেতে চাই সেটাই ভুলে গেলাম।

মন শক্ত করে বললাম : একটা Classic nachos  আর একটা Tostada chips ।
বললো:  ম্যাডাম, আরেকটা অর্ডার করে দিন, তাহলে ফোর্থ ডিশ টা ফ্রি।
বললাম:  এতো তো খেতে পারবোনা ভাই, পেট তো একটাই। তোমরা ফ্রি দিলে তো হবে না, হজমটা তো আমাদের করতে হবে। সেটা তো আর ফ্রি নয় ।
ছেলেটি আমার এই  ডায়ালগ একেবারেই appreciate করলো না  । হাসিটা যেন একটু কমে গেলো।
আমরা যেন ওর সব হিসেব ঘেঁটে দিয়েছি!

একটু বাদেই খাবার এলো । খুব ভালো টেস্ট ।
তৃপ্তি করে আমরা খেলাম, খেতে খেতে আরো একটি বিয়ার ও মার্গারিটাও অর্ডার করলাম।
পেট মন দুই ভরলো । কি তৃপ্তি! আহা....
নিন্দুকেরা যে কেন ক্যালোরি নিয়ে এতো বাজে বাজে rumour ছড়ায় বুঝিনা ।

বিল আনতে  বললাম।
ছেলেটি ততক্ষনে ট্রেতে সাজিয়ে তিন নম্বর বিয়ার আর মার্গারিটা এনে হাজির!
বললাম:  একি, এটা তো অর্ডার দিই  নি ।
এক গাল হেসে বললো, "ম্যাডাম এটা তো স্কিম এ ফ্রি ছিল"
বললাম : পেটে  তো আর জায়গা নেই ।
বললো: কিন্তু এটা তো ফ্রি ....
ফ্রি জিনিস  ও  যে কেউ প্রত্যাখ্যান করে, সেটার কোনো কন্সেপ্টই নেই বুঝলাম!

ঘড়ি দেখে বললাম: তখন তো বললে, "Happy Hour " !
আরো এক গাল হেসে ছেলেটি  বললো , "আজ সারাদিন Happy Hour ম্যাডাম "
বোঝো ঠেলা !সারাদিন Happy Hour !
খেতে পারলাম না ফ্রি ড্রিংক দুটো!
এহেন লোভনীয় স্কিম অবজ্ঞা করে বেরিয়ে যাওয়াতে ছেলেটি যারপরনাই আহত হলো বুঝতে পারলাম। মুখে আর হাসি নেই।

স্কিম ২:
মায়ের সাথে বিস্কুট কিনছিলাম।  Cookies, to be more precise.
৫০০ গ্রাম কুকিস ৫০০ টাকা। ওজনে তাতে যা কুকিজ উঠলো, আমাদের পরিবারের জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু  .......

"ম্যাডাম, একটা স্কিম আছে । ৯০০ গ্রাম নিলে ৬০০ টাকা দাম । সাথে এই cookie-jar Free"
বলে দোকানদার একটা সুন্দর প্লাস্টিকের কুকি ভরা কৌটো দেখিয়ে দিলো ।

মায়ের দিকে তাকালাম।
আমি Sure যে এতো কুকি দেখে মা আঁতকে উঠে বলবে "আরে বাবা অত কিনিস না, কে খাবে? "
এটাই expected usual response ।
কিন্তু তাকিয়ে দেখি মায়ের চোখ তখন গোলাপি ঢাকনাওয়ালা প্লাস্টিকের কৌটোয় (cookie-jar) আটকে গেছে ।
মা বললো , "কি সুন্দর না কৌটোটা?"
ব্যাস, বুঝলাম স্কিম সাকসেসফুল !
এখন সব কুকি-ফুকি ভুলে মা কেবল কৌটো দেখছে ! ঠিক অর্জুন যেমন মাছের চোখ দেখেছিলো! Totally focused !প্লাস্টিকের এমনি কৌটো (তাও আবার গোলাপি ঢাকনা)  "স্কীমে" FREE পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা? মনে মনে হয়তো ভাবছে এই কৌটো খালি হলে তাতে ছাতু রাখবে নাকি বিউলির ডাল!
দোকানদার খুশি হয়ে বললো, "মাসিমা, দিয়ে দি তাহলে ৯০০ গ্রাম?"
বুঝলাম স্কিম-স্ক্যামে জড়িয়ে পড়েছি । .....কোনো নিস্তার নেই।

একই স্কীম-স্ক্যাম দেখা গেলো এক মাসির বাড়িতেও।
মেসোকে বারবার হরলিক্স খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে করতে মাসি বললো  .....
"হরলিক্সটা শরীরের জন্য খুবই ভালো, বার বার বলছি তোর মেসোকে। কিছু ভুল বলছি বল?
তাছাড়া স্কীমে ১ কিলো হরলিক্স এর সাথে ২টো "খুব সুন্দর" কাঁচের গ্লাস FREE দিচ্ছে!"

[এখানে মা/মাসি একেবারেই কাল্পনিক চরিত্র কিন্তু। আমার মা / শাশুড়িমা কিম্বা অন্য কোনো আত্মীয়ার সাথে কোনো মিল নেই ;-)]

স্কিম ৩:
ক্যাশ কাউন্টারে  বিল পে করছিলাম।
ছেলেটি বললো , "ম্যাডাম আপনার মোবাইল নম্বরটা?"
বললাম : মোবাইল নেই!
একটু অবাক হয়ে বললো , "আমাদের দোকানের মেম্বারশিপ কার্ড আছে?"
বললাম : নেই !
বললো : একটা বানিয়ে দি?
বললাম : না ,  কার্ড বানাতে হবে না , আপনি বিলটা  ক্লিয়ার করে দিন ।
বললো : কার্ডটা বানিয়ে নিন ম্যাডাম,  নতুন কার্ড বানালে একটা স্কিম আছে।  আপনি পাবেন "সুহানা স্পা" র তরফ থেকে একটা ফ্রি ম্যাসাজ আর একটা "সুহানা" বডি লোশন ।
বললাম : না লাগবে না, প্লিস বিলটা বানান ।
নাছোড়বান্দা ।
"কিন্তু ম্যাডাম, সুহানার ফ্রি ম্যাসাজটা খুবই ভালো অফার , এমনি স্কিম পাবেন না কোথাও।" 
গম্ভীর মুখে বললাম "আমি ম্যাসাজ এবং বডি লোশন একদম পছন্দ করিনা  ...

ছেলেটির হাসি ভ্যানিশ ।
কোনোরকমে স্কিম-স্ক্যাম থেকে বেঁচে পালালাম।

দেশে বড্ড বেশি স্কিম ! নানা সরি, স্কিম -স্ক্যাম !!
😀

[.to be continued, যদি না কেউ পেটায় এইটা পড়ে ]