Friday 25 November 2016

হুঁশিয়ার ......নেহাতই রূপকথা


রাজা বসেছেন সিংহাসনে,
সাথে মন্ত্রী সেনাপতি,
ফয়সালা আজ করতে হবে  
হচ্ছে লাভ না ক্ষতি!
কোষাগারে সোনার মোহর  
কে করছে ভ্যানিশ ,
হাতে নাতে ধরলে তাকে 
রাজ্য থেকে banish !
রেগে রাজা দিলেন হুকুম 
ধরবো আমি চোর,
মোহর ফিরবে রাজকোষে আজ,
রাত হবে না ভোর!

শুনে কাঁপে উজির বেটা 
মাথায় পরে বাজ, 
ঘাম ছুটে যায় ভেবে ভেবে 
শেষ হলো রাম রাজ্ !
সিন্দুকে তার মোহর ভরা,
মাটির নিচে পোঁতা,
এমনি ভাবে পড়লে ধরা 
নাক যে হবে ভোঁতা!

দুয়োরানি হিংসুটি খুব  
সব কাজে দেয় বাধা,
ভীষণ বকেন রক্ষী ডেকে 
খবর পাসনি গাধা?
গলার জোরে তবুও আমি 
করবো কুপোকাত,
মা সারদা সাথে আছেন,
ঠিক জুটবে ভাত!

রাজপুরোহিত নামের জোরে 
নাড়িয়ে বড় টিকি,
বছর বছর জমিয়েছে ধন 
খরচ হয়নি  সিকি!
নামখানা তার রুপোর চামচ 
আজ ঝুলেছে শূলে,
পান থেকে চুন খসলে পরে 
মা দেয়  কান মুলে! 

দুয়োরানি উজির মিলে 
গড়লো  নতুন দল,
রাজপুরোহিত হাতে দিলেন
মন্ত্র ভরা ফল !
সকালবেলা উপোষ করে,
এক কামড়ে শেষ, 
রাজা মরবে ছটফটিয়ে 
বন্ধ মোহর-কেস !
জল্লাদ বেটা ঘাপটি মেরে 
শুনছিলো সব কথা,
'আমিও প্রজা' এই না বলে 
ঠুকলো ওদের মাথা!

বললো ,

"প্রজাদের আজ হয়রানি খুব,  
তবুও আশার আলো ,
কিছু না কিছু বদলাবে ঠিক 
আসছে যে দিন ভালো !
আর যাই হোক রাজ্য জুড়ে 
সাজ সাজ এক রব,
কি জানি এক কিসের আশায় 
এক হয়েছে সব !
প্রজার শোকে প্রজাই কাতর 
এই তো দেখতে চাই,
হাতেহাত ধরে একে অপরের 
সম্বল হও  ভাই !!
আজকের রাজা, কাল থাকবেনা 
থাকব তুমি আমি,
ভেদাভেদ ভুলে শুধু ভালোবাসো 
জীবন একটাই দামি !"












Wednesday 9 November 2016

নামো-র 'ট্রাম্প" কার্ড

                    যেদিকে তাকাই, পূর্ব পশ্চিম, বাজার আজকে hot !
                    কালো থেকে সাদা, হলো দুজনাই, রাতারাতি ঝটপট !

                    পূর্বে  টাকা হচ্ছে উধাও, পাঁচশো এবং হাজার,
                    এমন ছক্কা মেরেছে নেতা, ডুবলো কালো বাজার !
                    রাঘব বোয়াল দুই একখান যদি পড়ে জালে ধরা,
                    সার্থক তবে চুনোপুঁটিদের এই ঝামেলায় পড়া !
                    মানিব্যাগের একশো টাকা, পাঁচশোকে মারে খোঁচা 
                  "রাতারাতি তুই ঠোঙা হয়ে গেলি, উঁচু নাক হলো বোঁচা!"
                    গিন্নি বলেন "শাড়ির ভাঁজে আরো দুটো নোট পেলাম"
                    কর্তা হাসেন মিটিমিটি, মনে মনে নেতাকে সেলাম।



                    পশ্চিমে নেতা জিতলো এমন, জনতা হতবাক,
                    লজিক কিছু বোঝার আগেই লাগিয়ে দিলো তাক !
                    মাথা চুলকে অনেক কথা বলেছিলো গুণী লোকে,
                    ফেসবুকে আজ দেখছি তাদের ডুবেছে অপার শোকে !
                    কেউ বলেছিলো "অসম্ভব বোকা, খুঁজে পাবে না তল"
                    নেতা বোকা নন, বরং বোঝেন, কি চায় বোকার দল! 
                    বদলেছে দিন, বদলেছে লোক, বদলাতে হবে নেতা,
                    কি করবেন, কাল থেকে তিনি, জানে বল ভাই কে তা ?
                    
                    সময় বলবে কেবা ঠিক আজ, কেবা আজ করে ভুল,
                    চুনোপুঁটি আমি ফিরে যাই কাজে, বেকার ছিঁড়ছি চুল!
                    পূর্ব পশ্চিম মিলবে যখন, আরো হবে কত মজা,
                    নেতা সেই, যে ওড়াবে আকাশে,মানবিকতার ধ্বজা !



pc: www.india.com;bbc.com











Friday 4 November 2016

এরা বড়ই আপন



ফোনে:
"হ্যাঁগো , পটল কি জানতে পেরে গেছে ওর বাবার কথা?"
"ও তো আগের দিনই জেনে গেছিলো তবে অন্যরা জানে না যে ও জানে "
" আহারে ,অসহ্য লাগে ওই মহিলাকে, কি কষ্ট দেয় পটলটাকে "

বাস -এ :
"এতো খারাপ লাগছে মেঘ্লার জন্য"
"সেই, কোনোই দোষ নেই মেয়েটার, শুধু শুধু এতো কষ্ট ভোগ করছে।....."
"সবই কপাল, কেউ কি জানতো এমনি হবে?"

আড্ডায়:
"কনকের কিন্তু এবার মুখ খোলা উচিত"
"সেই তো, যত বেশি সহ্য করবে তত বেশি মাথায় চড়বে ওরা "

বিয়েবাড়িতে:
"আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম  গলার হারটা ওর ননদ চুরি করেছে!"
"কি করে বুঝলে?"
"গোয়েন্দা গিন্নি কেমন ধরলো দেখলে না ?"

মুদির দোকানে:
"উফফ ভুতুটা যা দুষ্ট হয়েছে না!"
"তাই? কেন গো? কি করেছে কাল? আমার কাল দেখাই হয়নি "
"ওই যে দাদুর কানে সুড়সুড়ি দিয়ে দিয়ে পালালো। এমা, তুমি মিস করে গেলে, দারুন ছিলো"

আলোচনার গাম্ভীর্য এবং আন্তরিকতা দেখে এক মুহূর্তের জন্য মনে হবে এরা  আমাদের আত্মীয় বা চেনা কেউ । প্রথম প্রথম একটু চোখ কান খুলে চেনার চেষ্টা ও করতাম। অনেকদিন দেশ ছাড়া তো, কি জানি হয়তো ভুলে গেছি ।....
পটল কি পাশের বাড়ির ঝাঁকড়া চুলওয়ালা ছেলেটা?
কনক কি আমার মামাতো বোনের মেয়ের নাম?
মেঘলা কি আমার শ্বশুরবাড়ির দিকের কেউ ?
ভুতু কি মেজপিসিমার ছোট নাতি?
এই রে.......কার আবার হার চুরি হলো?

পরে বুঝলাম যে এরা আসলে সবার চেনা!  এরা বাংলা সিরিয়ালের চরিত্র । সোম থেকে শনি -দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী ।বছরের পর বছর এই সিরিয়ালগুলো চলতে চলতে এমন অবস্থা যে পটল, কনক, মেঘলা, ভুতু এখন পরিবারের সদস্য।ওদের সুখ দুঃখ এখন যে কোনো আলোচনার অঙ্গ।ট্রামে, বাসে, বিয়েবাড়িতে, পৈতেবাড়িতে, ফোনে  ...........
নিজেরা দেখিনা বলে হয়তো ঠিক বুঝতে পারিনা । তবে এবার ঘটনাচক্রে দু একখানা চোখে পড়েই গেলো ।
একটা হিজিবিজি রিভিউ দরকার!
[পরের ইন্ডিয়া ট্রিপ এ বাপেরবাড়ি -শশুরবাড়ি। ..কোথাও ঢুকতে দেবে না আমাকে]
;-)

গল্প:  এক দুটো পর্ব দেখেই বুঝলাম সব কটার গল্পের বিষয়বস্তু বড়ই বাজে । সাংসারিক যত প্যাঁচ সম্ভব, সব উজাড় করে গল্পে ঢেলে দিয়েছেন লেখক! কারণ যত প্যাঁচ তত পপুলারিটি ।শাশুড়ি বৌমা খিচখিচ তো আছেই, সাথে ননদের কুটিলতা, বড় জায়ের হিংসে, খুড়শাশুড়ির ছল, মামার অত্যাচার, মাসির বেইমানি, বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা। .....কিছু বাদ নেই! সব কিছু ঘেঁটে যা ঘ্যাঁট পরিবেশন করছেন, জনতা তাই খাচ্ছে।একটাও কন্সট্রাক্টিভ চিন্তা নেই!
এমনি একটি সিরিয়ালে একটি বাচ্ছা মেয়ের অভিনয় দেখলাম ! মেয়েটি খুবই ছোট, বছর ছয়েক বয়স । কিন্তু সিরিয়ালে সে ভিলেন । প্রচন্ড কুচুটে এবং অত্যন্ত নেগেটিভ ক্যারেক্টার । একদম অবাস্তব!!
ভুরু কুঁচকে, মুখে বেঁকিয়ে সে কখনো বা সরল সোজা হিরোকে কষ্ট দিচ্ছে, কখনো বা চোখ পাকিয়ে অত্যন্ত ঘৃণার দৃষ্টি নিয়ে তার বাবার দিকে তাকাচ্ছে, কিংবা ভীষণ অভদ্র ভাবে মায়ের সাথে কথা বলছে! এতই সুন্দর অভিনয় যে দর্শকদের বাহবার শেষ নেই।আমি ভাবছিলাম মেয়েটিকে এই চরিত্র অভিনয় করাতে গেলে সিচুয়েশান বোঝাতেই হবে । ডাইরেক্টার কি করে একটি ছয় বছরের শিশুকে  এই কুটিল এবং জটিল ব্যাপারটা বোঝাচ্ছেন? সে চোখে মুখে এই ঘৃণা ফুটিয়ে তুলছে কি করে? কিসের বীজ বুনছি  আমরা এই ৬ বছরের শিশুটির মাথায়? এটা  কি অভিনয় এর দক্ষতা? নাকি কুচুটেপনার শিক্ষা? বয়স যখন পুতুল খেলার তখন শেখাচ্ছি শাশুড়ি-ননদের কুটিলতা?
ছোট্ট মেয়েটির জন্য কষ্ট লাগছিলো।ভূত পেত্নী -র মেয়ে ছাড়া এমনি চরিত্র নর্মালি অসম্ভব , অবাস্তব, অতিরঞ্জন!

সাজগোজ : অনেকসময় গল্প খারাপ হলেও নায়ক নায়িকা, তাদের সাজ পোশাক, এইসব দেখে সময় কেটে যায়। এক্ষেত্রে সে গুড়েও বালি । মহিলাগুলোর এমন সাজ যে মনে হয় সাক্ষাৎ মা কালির পাশে দাঁড়ানো ডাকিনি যোগিনী। কপালে এমন বড় টিপ্ যেন একটা গোটা থালা কপালে । যার টিপ্ যত বড় সে তত কুটিল! কাজলের রেখা দুই নয়ন ছেড়ে মাইল খানেক ওপর এবং নিচ অবধি টানা। বিভিন্ন রঙের চুল ঠাকুরমার ঝুলির যে কোনো ডাইনি বুড়িকে লজ্জায় ফেলে দেবে।কানে ওগুলো দুল নাকি ঝাড়লণ্ঠন বোঝা মুশকিল । অথচ মধ্যবিত্ত পরিবারের উনি নাকি বড়বৌ!! বড়বৌ না শাঁকচুন্নি!!

মিউজিক : প্রত্যেকটা কথার মাঝে যে পরিমান ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক দেওয়া হয়....মাথা কান ঝালাপালা করে। ভালো কথা বললে ঝ্যাং! খারাপ কথা বললে ঝ্যাং ঝ্যাং! কোনো কথা না বললে ঝ্যাং ঝ্যাং ঝ্যাং! ক্যামেরা ও অদ্ভুত।ডিরেক্টরের নির্দেশ অনুযায়ী সেই ঝ্যাং ঝ্যাং এর সাথে একই চেহারার ওপর ততবার ফোকাস। চরম নাটকীয়তা। নায়ক নায়িকার থেকে ক্যামেরা আর মিউজিকের বেশি অভিনয়!অসহ্য!

নায়িকা: আরে নানা, সিরিয়ালে ভালো মানুষ ও আছে।নায়িকা এতই ভালো যেন একেবারে নিপাট গরুটা! মানে ভালো আর বোকার মধ্যে কোনো বিভেদ নেই।চারিপাশের কুটিল প্লট, কিছুই বুঝতে পারেনা। ঘরের কোনে কাঁদে (হ্যাঁ ব্যাক গ্রাউন্ড এ বেহালা বাদক তখন life time achievement award এর কথা ভেবে বাজাচ্ছেন করুণ সুর), তবু মুখ খুলবে না, এমন ভালো।জনতা তাতেও খুশি ।শাড়ির আঁচলে একটু চোখ মুছেও আনন্দ!

সব থেকে মজার ব্যাপার সিরিয়ালগুলোর গল্প সপ্তাহে দুই মিলিমিটার এগোয়। শুরু হয় মিনিট পাঁচেক "গতকাল দেখেছেন" দিয়ে। শেষ হয়  পাঁচ মিনিট "আগামীকাল  দেখবেন" দিয়ে । তারপর আছে পাঁচ মিনিট চবনপ্রাশ, ম্যাগি কিংবা সার্ফ এর বিজ্ঞাপন । তারপর যেটুকু সময় থাকলো তাতে গুচ্ছ গুচ্ছ নাম..closing credits -কস্টিউম থেকে কুচুটেপনা। বাকি গল্পের জন্য বাকি রইলো মিনিট পাঁচেক। তার থেকে ক্যামেরার  ঝ্যাং ঝ্যাং এ আরো মিনিট তিন গেলো। পরে রইলো দুই....তাতে গল্পের নায়িকা (পঁচিশ মণ সোনার গয়না পড়া) নায়ককে একটা প্রণাম করে বললো "আমি তোমার আপন" । 
ঝ্যাং!
ঝ্যাং !
ঝ্যাং!
গল্প শেষ, আবার আসছে কাল।


প্রশ্ন হলো এই সিরিয়ালগুলো এতো জনপ্রিয় কেন?
কেন? কেন? কেন?
উত্তর দাও.....উত্তর দাও......উত্তর দাও....(বাবা তারকনাথ সিনেমার স্টাইলে)