কদিন ধরেই মা কে বলছি পুরোনো audio-cassette গুলো ফেলে দিতে।
মায়ের হাতে এখন স্মার্ট ফোন।Youtube এর দৌলতে, সমস্ত রকমের গান বাজনা মায়ের হাতের মুঠোয় (literally!)। খুব গান শোনে মা!
অথচ মায়া করে প্রচুর cassette রেখে দিয়েছে বাইরের ঘরে সাজিয়ে। আর শুধু সাজিয়ে রাখলেই তো হলো না, তাকে রোজ ঝাড়পোছ ও করতে হয়, যা ধুলো!
তারওপর আবার মায়ের passion ঘর সাজানো !
খুঁজলে ভগবান পেয়ে যাবে কিন্তু আমাদের বাড়িতে এক কণা ধুলো খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন!
যাইহোক, মনে হলো কথাটা মনে ধরেছে। বললো,
"সত্যি ওগুলো সাজিয়ে রেখে কি লাভ? আজকাল যখন শোনাই হয় না, ঠিকই বলেছিস "
গতকাল আবার ফোন করেছিলাম ।
"কি হলো, সব ফেললে?"
"হ্যাঁ , তুই বলার পর সব ফেলে দিলাম। শুধু দু একটা ভালো রেখে দিলাম।..."
আমি মনে মনে ভাবলাম , তাহলেই হয়েছে! "দু একটা" মানে জানা আছে!
😀
😀
আজ বিকেলে অফিস থেকে ফিরছি। whatsapp এ মায়ের মেসেজ । একটা audio-clip।
মা গান ভালোবাসে, ভালো কিছু শুনলে শেয়ার করে । ভাবলাম নিশ্চয় একটা গানই হবে।
(কারণ অন্য সব ফরওয়ার্ড মানা করা আছে ;-) ....)
চালালাম audio ক্লিপটা .......
"এক ছিল রাজা, তার ছিল দুই রানী ......."
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। আরে এতো আমার ঠাকুমার গলা!
দুর্গাপুর এর বাড়িতে বসে ঠাকুমা আমাকে আর ভাইকে গল্প শোনাচ্ছিল।
বহুদিন আগের কথা, কিন্তু কি আশ্চর্য রকমের ঝকঝকে ছবি ভেসে উঠলো স্মৃতির ঝোলা থেকে।
ঠাকুমা থাকতেন জামশেদপুরে। আমরা থাকতাম দুর্গাপুরে। গরমকালে ঠাকুমা লম্বা ছুটিতে আসতেন আমাদের কাছে। রোজ ঠাকুমার কাছে গল্প শুনতাম । ঠাকুমার ঝুলিতে অনেক গল্প ছিল। মাঝে মাঝে সন্ধেবেলা লোডশেডিং হয়ে যেতো। বাগানে ফোল্ডিং খাট পেতে আমরা বসতাম। জোনাকির আলো, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, সাথে ঠাকুমার গল্প ! কোথায় লাগে তোমাদের আজকের "Netflix"!!
ঠাকুমার আঁচলের আড়াল ছিল জগতের safest জায়গা। মানে মা বাবার বকাঝকার আয়ত্তের বাইরে।
সেই কটা দিন মায়ের চোখ রাঙানি ভ্যানিশ ! বাবার গম্ভীর গলা ভ্যানিশ !
সেবার গরমকালে নতুন নতুন একটা টেপ-রেকর্ডার কেনা হয়েছে। National Panasonic ।
বাড়িতে মারাত্মক উত্তেজনা। যা কিছু ঘটে, সেটাই রেকর্ড করা হয়। নিশ্চয় এমনি একটা মুহূর্তে ঠাকুমার গল্প ও রেকর্ড করা হয়েছিল।
এই গল্পটা ঠাকুমার ফেভারিট গল্প ছিল, আমরা বহুবার শুনেছি ।তবু ভালো লাগতো।
সেই এক রাজা, তার দুই রানী। একজন ভালো, একজন বাজে।
আজ ট্রামে অফিসফেরত আবার সেই গল্প শুনলাম।
হল্যান্ডের ট্রামে বসা অফিসফেরত মন পৌঁছে গেলো দুর্গাপুরের খাটে বসা ঠাকুমার কোলে।
Hats off to technology!
সঙ্গে সঙ্গে মা কে ফোন করলাম।দারুন ভালো একটা অনুভূতি। মা বললো,
"হাতে টাইম ছিল, তাই ফেলার আগে কয়েকটা বাজিয়ে বাজিয়ে দেখে তবে ফেলেছি"
শুনলাম কি করে মা প্লেয়ারে ওটা বাজিয়ে স্মার্ট ফোনে re-record করে আমাকে পাঠিয়েছে।
অনেক বাহবা দিলাম ।Well done মা! থ্যাংক ইউ !
বললাম "ভাগ্গিস দু একটা তুমি রেখে দিয়েছিলে, আমার কথা শুনে সব ফেলে দাওনি "..........
পরে আরো অনেক বার শুনলাম গল্পটা।সত্যি সুয়োরানীটা কি মারাত্মক হিংসুটে ....
ঠাকুমা, দুর্গাপুর, ছেলেবেলা, দুয়োরানি সুয়োরানী, ছেলের স্কুলের টিফিন, কর্তার ট্রাভেল, আমার প্রজেক্ট .... ......আরো অনেক কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম এসে গেলো। ....
[ Audio attached]
দাদু দিদা, দাদু ঠাকুমা এক অমূল্য সম্পদ । জগতের সকল ঠাকুমা দিদিমাকে উৎসর্গ করলাম এই পোস্ট ]
pc:wikipedia
[ Audio attached]
দাদু দিদা, দাদু ঠাকুমা এক অমূল্য সম্পদ । জগতের সকল ঠাকুমা দিদিমাকে উৎসর্গ করলাম এই পোস্ট ]
pc:wikipedia