Tuesday 29 January 2019

ঠাকুমার ঝুলি থেকে -একটি অমূল্য সম্পদ



কদিন ধরেই মা কে বলছি পুরোনো audio-cassette গুলো ফেলে দিতে। 
মায়ের হাতে এখন স্মার্ট ফোন।Youtube এর দৌলতে, সমস্ত রকমের গান বাজনা মায়ের হাতের মুঠোয় (literally!)। খুব গান শোনে মা!
অথচ মায়া করে প্রচুর cassette রেখে দিয়েছে বাইরের ঘরে সাজিয়ে। আর শুধু সাজিয়ে রাখলেই তো হলো না, তাকে রোজ ঝাড়পোছ ও করতে হয়, যা ধুলো! 
তারওপর আবার মায়ের passion  ঘর সাজানো  !
খুঁজলে ভগবান পেয়ে যাবে কিন্তু আমাদের বাড়িতে এক কণা ধুলো খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন!

যাইহোক, মনে হলো কথাটা মনে ধরেছে। বললো,
"সত্যি ওগুলো সাজিয়ে রেখে কি লাভ? আজকাল যখন শোনাই হয় না, ঠিকই বলেছিস " 

গতকাল  আবার ফোন করেছিলাম । 
"কি হলো, সব ফেললে?"
"হ্যাঁ , তুই বলার পর সব ফেলে দিলাম।  শুধু দু একটা ভালো রেখে দিলাম।..."

আমি মনে মনে ভাবলাম , তাহলেই হয়েছে! "দু একটা" মানে জানা আছে!
😀

আজ বিকেলে অফিস থেকে ফিরছি। whatsapp এ মায়ের মেসেজ । একটা audio-clip।
মা গান ভালোবাসে, ভালো কিছু শুনলে শেয়ার করে । ভাবলাম নিশ্চয় একটা গানই হবে। 
(কারণ অন্য সব ফরওয়ার্ড মানা করা আছে ;-) ....)

চালালাম audio ক্লিপটা  .......

"এক ছিল রাজা, তার ছিল দুই রানী  ......."

গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। আরে এতো আমার ঠাকুমার গলা! 

দুর্গাপুর এর বাড়িতে বসে ঠাকুমা আমাকে আর ভাইকে গল্প শোনাচ্ছিল। 
বহুদিন আগের কথা, কিন্তু কি আশ্চর্য রকমের ঝকঝকে ছবি ভেসে উঠলো স্মৃতির ঝোলা থেকে।

ঠাকুমা থাকতেন জামশেদপুরে।  আমরা থাকতাম দুর্গাপুরে। গরমকালে ঠাকুমা লম্বা ছুটিতে আসতেন আমাদের কাছে। রোজ ঠাকুমার কাছে গল্প শুনতাম । ঠাকুমার ঝুলিতে অনেক গল্প ছিল। মাঝে মাঝে সন্ধেবেলা লোডশেডিং হয়ে যেতো। বাগানে ফোল্ডিং খাট পেতে আমরা বসতাম। জোনাকির আলো, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, সাথে ঠাকুমার গল্প ! কোথায় লাগে তোমাদের আজকের "Netflix"!!
ঠাকুমার আঁচলের আড়াল ছিল জগতের safest জায়গা। মানে  মা বাবার বকাঝকার আয়ত্তের বাইরে।
সেই কটা দিন মায়ের চোখ রাঙানি ভ্যানিশ ! বাবার গম্ভীর গলা ভ্যানিশ !
সেবার গরমকালে নতুন নতুন একটা টেপ-রেকর্ডার কেনা হয়েছে। National Panasonic ।
বাড়িতে মারাত্মক উত্তেজনা। যা কিছু ঘটে, সেটাই রেকর্ড করা হয়। নিশ্চয় এমনি একটা মুহূর্তে ঠাকুমার গল্প ও রেকর্ড করা হয়েছিল।
এই গল্পটা ঠাকুমার ফেভারিট গল্প ছিল, আমরা বহুবার শুনেছি ।তবু ভালো লাগতো।  
সেই এক রাজা, তার দুই রানী। একজন ভালো, একজন বাজে। 

আজ  ট্রামে অফিসফেরত আবার সেই গল্প শুনলাম। 
হল্যান্ডের ট্রামে বসা অফিসফেরত মন পৌঁছে গেলো দুর্গাপুরের খাটে বসা ঠাকুমার কোলে।
Hats off to technology!

সঙ্গে সঙ্গে মা কে ফোন করলাম।দারুন ভালো একটা অনুভূতি। মা বললো,
 "হাতে টাইম ছিল, তাই ফেলার আগে কয়েকটা বাজিয়ে বাজিয়ে দেখে তবে ফেলেছি"
শুনলাম কি করে মা প্লেয়ারে ওটা বাজিয়ে স্মার্ট ফোনে re-record করে আমাকে পাঠিয়েছে। 

অনেক বাহবা দিলাম ।Well done মা! থ্যাংক ইউ !
বললাম "ভাগ্গিস  দু একটা তুমি রেখে দিয়েছিলে, আমার কথা শুনে সব ফেলে দাওনি "..........

পরে আরো অনেক বার শুনলাম গল্পটা।সত্যি সুয়োরানীটা কি মারাত্মক হিংসুটে   ....
ঠাকুমা, দুর্গাপুর, ছেলেবেলা, দুয়োরানি সুয়োরানী, ছেলের স্কুলের টিফিন, কর্তার ট্রাভেল, আমার প্রজেক্ট  .... ......আরো অনেক কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম এসে গেলো। ....

[ Audio attached]
দাদু দিদা, দাদু ঠাকুমা এক অমূল্য সম্পদ । জগতের সকল ঠাকুমা দিদিমাকে উৎসর্গ করলাম এই পোস্ট ]
pc:wikipedia


Wednesday 23 January 2019

ট্রাম ট্রাভেলস ১

Mariaর  আজও দেরি হয়ে গেলো। উষ্কখুষ্ক চুল কি আর সাধে? যত ভাবে অ্যালার্ম বাজলেই ধড়পড় করে উঠে পড়বে, কিছুতেই হয়না! চোখদুটো বড় জেদি, কিছুতেই খুলবে না। বার বার অ্যালার্ম snooze করতে গিয়ে রোজ একই কেলেঙ্কারি!  ফার্স্ট পিরিওড ফ্রেঞ্চ, Mr. Dubois বড্ড কড়া, অনেকবার ওয়ার্নিং দিয়েছেন । ট্রামটা যে কেন এত আসতে চলে ! ব্যাজার মুখ করে বাইরে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো গতি নেই  !

Peter এর অফিসটা একদম সিটি সেন্টারে। সেখানে পার্কিং পাওয়া আর ভগবান পাওয়া একই ব্যাপার।অগত্যা ট্রাম । প্রথমদিকে একদম ভালো লাগতো না। গাড়িতে অনেক আরাম, নিজের মর্জির মালিক।ট্রামের টাইমের সাথে নিজেকে এডজাস্ট করা কি চাট্টিখানি কথা? আজকাল অবশ্য খারাপ লাগে না।, নতুন করে বই পড়ার অভ্যেসটা আবার হচ্ছে । হাতে বই এর টাইটেল , " Life is what you make it", মন্দ লাগছে না ।

Jahan রোজ Edi কে স্কুলে ড্রপ করে। পাঁচ বছরের Edi ট্রামে উঠে এতো কথা বলে যে মাঝে মাঝে Jahan এর লজ্জাই লাগে! গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন। ..মা এটা কেন? মা ওটা কেন? মা এটা কি? মা ওটা কি? আসলে মা ছাড়া কাকেইবা জিজ্ঞেস করবে? Rob তো উইকেন্ড বাবা ! যাগ্গে পুরোনো কথা ভেবে লাভ নেই । Edi কে ড্রপ করে দৌড় লাগাতে হবে দোকান খুলতে। "Edi, please do not press that button!!"

Ben রোজই ভাবে ব্রেকফাস্টে ডিম খাবে না । কিন্তু ঠিক সকালে  উঠে ডবল পোচ না খেলে যেন ভালো লাগেনা। কি একটা missing ! তারপর দৌড়ে ট্রাম ধরার পর কেমন জানি আইঢাই লাগে। আসলে ছোট থেকেই ওর খেতে একটু বেশি ভালো লাগে।তাই ওজন ও আর পাঁচটা ১৬ বছরের ছেলের থেকে বেশি ।সকালে জিম জয়েন করার আইডিয়াটা ওর মায়ের। বসার জায়গা না পেলে ওই ব্যাজার মুখ করে সারা রাস্তা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। ভাগ্গিস স্মার্ট ফোন আছে !

Tia overseas এসাইনমেন্ট এ আজ তিনমাস ব্যাঙ্গালোরের বাইরে। Rahul শুরু থেকেই বলছিলো, "পারবে না একা থাকতে" ।খানিকটা জোর করেই আসা । রাহুলের মা খুব সাপোর্ট করেছিলেন। বলেছিলেন, "একদম যাবি , এমনি সুযোগ কজন পায়?" Tia এই ট্রামে অফিস যাবার পথে রোজ শাশুড়ি কে গুড মর্নিং কল করে। হাসি হাসি মুখ....."মাম্মিজি আজ ব্রেকফাস্ট মে ফিরসে টোস্ট "

Henk কাল ৭৫ এ পড়লো । দুই ছেলে বৌমা নাতি নাতনি সবাই এসেছিলো। "Lang zal ze leven" গাইলো সবাই মিলে ।খুব মজা হলো । আজকে সত্যি বলতে কি একটু ক্লান্তই  লাগছে। তবে ট্রামে করে এসে Zuiderpark এ হাঁটা রোজকার রুটিন। ঐটা না হলে মন বা শরীর কোনোটাই ভালো থাকে না !

Liz আর Sam পাশাপাশি বসে। একই অফিসে কাজ করে । সেই সূত্রেই আলাপ, আলাপ থেকে ভাব, ভাব থেকে ভালোবাসা। "আজ ডিনার কে বানাবে?" "তুমি গার্ডেন দরজা লাগিয়েছিলে ঠিক করে?" "আজকে আমার টিম ডিনার আছে" "তুমি আজকে লাল টাই কেন পড়লে?" "spotify এ আরিয়ানার  নতুন গানটা শুনেছ?" হাসি খুশি মুখ   ......

...............................................................................................................
Volgende stap Javabrug. Vergeet niet uit te checken met jouw OVchipkart voor je uitstapt!
Next stop is Javabrug. Do not forget to check out with your OV-chipcard

এক ঝটকায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম । আমার স্টপ এসে গেছে , নামতে হবে......
আজ বেশ কিছু মাস  হলো ট্রামে অফিস যাতায়াত করছি। ট্রামে কত রকম লোক ওঠে ।সবাই যেন কেমন চেনা চেনা হয়ে গেছে। ....

আবার কাল.........


Wednesday 16 January 2019

পিঠেপুলি ভাইভাই



[Chorus]
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই পিঠের রাজত্বে,
রূপেগুনে ঠাসা আজও, নই ক্যালোরি দাসত্বে!
😎
আমি একটু চ্যাপ্টা বটে, ভেতরে পুর ঠাসা,
এক কামড়ে স্বর্গলাভ ,খেতে এমন খাসা !
এক নামে চেনে সবাই, কেউ যায় না ভুলে,
ফোকলা হলেও নো প্রবলেম,নরম তুলতুলে!
পাটেপাটে ভাঁজ আমি, ফিটফাট হয়ে থাকি,
অতি সুস্বাদু পাটিসাপ্টা, প্লেটে একখান রাখি?
😎
আমি গোলগাল,নাদুস নুদুস, একটু নাহয় মোটা,
পেটে ভরা ক্ষীর-নারকোল, খাওনা দুটো গোটা ! 
কেউ ভেজে খায়, কেউ সেদ্ধ, কেউ ফুটিয়ে দুধে,
চেটেপুটে প্লেট করে সাফ, বৃদ্ধ থেকে ক্ষুদে !
চন্দ্র পুলি, মুগের পুলি, আমার অনেক নাম ,
যে নামেই ডাকো আমায়, রসনার আরাম!
😉
গোকুল বলে আদর করে সবাই আমায় ডাকে,
প্লেটে আমায় দেখলে তারা দুঃখ ভুলে থাকে !!
ওপর আমার ভাজা মুচমুচে, মাখা মিষ্টি রসে 
একটি কামড় দিলে আর মন থাকে না বশে ! 
হৃদয় আমার কোমল অতি, এমন ভরা পুর,
ভুলিয়ে দেবে সকল জ্বালা, শীতের নলেন গুড়!
😉
[Chorus]
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই পিঠের রাজত্বে,
রূপেগুনে ঠাসা আজও, নই ক্যালোরি দাসত্বে!
পিঠেপুলিতে রসনা তৃপ্ত থাকুক অনুক্ষণ,
সংক্রান্তির আমেজে আজ ভরুক সবার মন!

Tuesday 8 January 2019

ঘোর "কোহলির" সন্ধ্যা

                               ক্রিকেট পাগল ভারতবাসী 
                               আনন্দে মাতোয়ারা,
                               জিতেছে ভারত, উল্লাসে আজ,
                               উঠলো মেতে পাড়া! 
                               ছক্কা চার! পগার পার!



                                 পিটিয়ে ছাতু বলের হালত,
                                 করলো এমন পূজারা,
                                 এক পলকে বদলে দিলো 
                                  ইতিহাসের ধারা !
                                ছক্কা চার! পগার পার!


pc: NDTV
                              কর্তা নাচেন, গিন্নি নাচেন, 
                               নাচে সারা দেশ,
                               জিতের মুকুট মাথায় নিয়ে 
                               লাগছে মোদের বেশ!
                              ছক্কা চার! পগার পার!             
                               
                               ক্রিকেট পুজো সবার সেরা, 
                               ভোলায় ব্যথা সকল,
                               Pollution আর Election এর 
                               যাচ্ছে বড়ই ধকল!
                               ভুলে মন্দির, ভুলে ভাঙা ব্রিজ 
                               ভুলে বনধের জ্বালা,
                               স্ক্যামের বাজার ভুলে কিছুক্ষণ  
                               গর্ব করার পালা !
                               ক্রিকেট ফিভার চললে পরে 
                               শান্তি থাকে দেশে,
                               দেশের সবাই "এক" হয়ে যায়  
                               ক্রিকেট ভালোবেসে!
                             ছক্কা চার! পগার পার!

সাবধানবাণী :
                    ব্যাট হাতে জনতা যদি একবার মাঠে নামে, 
                     পিটিয়ে ছাতু করবে তখন সবারে ডাইনে বামে,
                     দেশটাকে "বনধ" করার, নেই কারো অধিকার,
                     ঘোর "কোহলির" সন্ধ্যা আজ, করছি হুঁশিয়ার !
                     এখনো আছে সময়, তাই বলছি বারংবার,
                     লক্ষ কোটি মাঠে নেমে আজ  ..........
                                  "ছক্কা চার! পগার পার!"


Title credits: Joydeep Mukherjee