Friday 18 August 2017

সবই অভ্যেস

ফিরলাম দেশ থেকে। কিছু টুকটাক observation, like always . ;-)



wikipedia 
১. কথা 

দেশের বাইরে আছি বেশ কিছু বছর হয়ে গেলো। বয়স ও হচ্ছে । ফলে আজকাল যখন দেশে যাই, কেমন জানি অনেক ক্ষেত্রেই  মনে হয় 'উফ আমরা কতো কথা বলি'। সবই অভ্যেসের ব্যাপার।
আবার পুরোটাই আমার মনের ভুল ও হতে পারে ,আর তারওপর ওই যে বললাম। ..বয়স...একটু খেঁচা টাইপের হয়ে গেছি মনে হয় !
মুড্ ভালো থাকলে অবশ্য কথাগুলো বেশ মজাও লাগে, হিজিবিজির রসদ পেয়ে যাই।

কলকাতায় আরামবাগ বলে একটা grocery স্টোর খুলেছে বেশ কিছুদিন হলো।
বাড়িতে বিস্কুট শেষ, গেছিলাম কিনতে ।
দরজা দিয়ে ঢোকা মাত্রই দাড়োয়ান ব্যাগ জমা করে নিলো, হাতে ধরিয়ে দিলো শপিং বাস্কেট । বাইরের গরম থেকে AC -র ঠান্ডাতে চোখ বুজে এলো।

এক পা এগিয়েছি কিনা হঠাৎ এক মহিলা এসে.....

"স্কিনটা তো দেখছি বেশ খারাপ। তার ওপর অজস্র open  pores গালে এবং চিবুকে"

এক মুহূর্তের জন্য একটু হকচকিয়ে গেলাম । কোনো দূর সম্পর্কের আত্মীয় নয়তো? হয়তো আমি চিনতে পারিনি! ;-)
পরক্ষনেই বুঝলাম উনি কোনো কোম্পানির কিছু প্রোডাক্ট মার্কেটিং করছেন।
এমনি ডাইরেক্ট মার্কেটিং এর অভ্যেস অনেকদিন চলে গেছে। একটু রাগ ও হলো...আরে বাবা আমার স্কিন আমার pores , তাতে আপনার কি?

"আপনি জয়েস এর toner এবং moisturizer টা ব্যবহার করতে পারেন" বলে মহিলা আমার হাতে একটি গোলাপি পদার্থ ধরিয়ে দিলেন। কোনো জিজ্ঞেস আবাদের বালাই নেই।
কেমন জানি একটা ওভার confidence ওনার গলায়, যেন এক মহিলাকে 'খারাপ স্কিন' এর হাত থেকে বাঁচিয়ে উনি ধন্য করেছেন।

আমি গোলাপি পদার্থটি ওনার হাতে ফেরত দিয়ে বললাম, না আসলে আমি কিছু ব্যবহার করিনা। থাঙ্কস ।

"ওইটাই তো ভুল করেন , স্কিন তো খারাপ হবেই"  
(ওরে বাবা এতো আমার বড়  পিসিমার থেকেও কড়া )

আমি এগিয়ে গেলাম।  চোখে মুখে একটু বিরক্তি। একেই স্কিন খারাপ বলেছেন, যতই ওপরে দেখাই যে গায়ে মাখিনি, একটু খারাপ তো লেগেইছে ..

উনিও এগিয়ে এলেন।

"চোখের তলায় এতো কালি, কিছু ভেবেছেন এই নিয়ে?"

মরেছে !! আমার চোখের তলার কালি নিয়ে আমার মাকেও এমনি উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে দেখিনি। চুপ থাকলাম, একটু ভ্যাবাচ্যাকা মুখ করে। আসলে সত্যি এমনি ডাইরেক্ট পার্সোনাল সেলস এর অভ্যেস চলে গেছে বহু বছর , বুঝতে পারিনা ঠিক কি উত্তর দেবো। আবার পুরোপুরি অবজ্ঞা করতে গেলে নিজেকে রুড মনে হয় ।আমাদের পাশ দিয়ে কিন্তু অনেকেই দোকানে প্রবেশ করেছেন ততক্ষনে, তাদের দিকে উনি তাকাচ্ছেন না ! হয়তো ওনাদের স্কিন ঠিক আমার মতন খারাপ নয়!!
আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন যেন উত্তরের অপেক্ষায়। আমি তখন মিনমিন করে বললাম "অনেক কিছু ট্রাই করেছি, কাজ হয়নি", বলেই হাঁটা লাগলাম বিস্কুটের দিকে। ...

"জয়েস এর eye লোশনটা  ট্রাই করুন, এক সপ্তাহের মধ্যে ফল পাবেন, রাতে শুতে যাওয়ার আগে একবার করে লাগাবেন,  জয়েস face wash দিয়ে মুখে ধুয়ে "।

আর নিতে পারলাম না ।
বললাম " আমি জয়েস কেন কোনো প্রোডাক্টই ট্রাই করতে চাইনা, বিস্কুট কিনতে এসেছি, চা খাবো "....

আমার এহেন সৌন্দর্য সম্পর্কে অসচেতনতা দেখে মহিলা একটু বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন দরজার কাছে। ...আবার কার স্কিন খারাপ দেখতে!
আসলে ওনার কাজ উনি ঠিক করছিলেন। আমারই এই ধরণের sales এর অভ্যেস চলে গেছে একেবারে। ..সবই অভ্যেস !
;-)

২. আরো কিছু কথা 

বিস্কুট কিনে বাড়ি ফেরার পথে রোলের দোকান। ছেলে তো দেশে গেলে এই দোকানের এগ রোলের ডেলি কাস্টোমার হয়ে যায়। যথারীতি গিয়ে দাঁড়ালাম কাউন্টার এ । ভদ্রলোক হেসে বললেন
"দুটো এগ রোল, একটা লঙ্কা ছাড়া তো? একটু অপেক্ষা করতে হবে"
আমার আগেই ছেলে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। অর্থাৎ এহেন অমৃত খাওয়ার জন্য সে অপেক্ষা করতে রাজি!
ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিলো, আমরা রাস্তার এক সাইডে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

পাশে, ঠিক দোকানের বাইরে সবেধন একটিমাত্র প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে একটা মহিলা ফিশ কাটলেট খাচ্ছেন, সাথে কাসুন্দি । এক ভদ্রলোক মহিলার মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, নিজে কিছু খাচ্ছেন না। দৃশ্যটি যারপরনাই রোমান্টিক, মহিলা ভাগ্যবতী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কি জানি হয়তো বা ভদ্রলোকের cholesterol আছে, মহিলার হয়তো Sugar ! তাই হয়তো রোলের দোকানে কর্তা ছাতা ধরেন আবার মিষ্টির দোকানে গিন্নি! এইসব ভাবছিলাম ওনাদের দিকে তাকিয়ে। ...

হটাৎ ভদ্রলোক আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
" ওবাবা, এ যে দেখি সিনেমা থেকে নেমে আসা সাক্ষাৎ গোগোল !!"

আমার বারো বছরের ছেলের গোগোলের সাথে ঠিক পরিচয় নেই । বাংলা ভালোই বলে, তবে মুখ দেখে বুঝলাম  ভদ্রলোকের কমেন্ট একটুও বোধগম্য হয়নি।
ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো । প্রথমে ওনার দিকে তারপর আমার দিকে। আমি এগিয়ে এসে কিছু বোঝাবার জন্য মুখ খোলার আগেই  ....
উনি বললেন " ওমা তুমি গোগোলকে চেনো না?"

ছেলে মাথা নাড়িয়ে না বললো । আবার আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি!
আমি আবার মুখ খোলার আগেই  ........
"ও তো দারুন গোয়েন্দা! তুমি জানো  না? সে কি কথা?"

 ছেলে আবার মাথা নাড়িয়ে না জানালো । মনে হয়না 'গোয়েন্দা ' শব্দটাও ওর চেনা!
;-) গোগোল, গোয়েন্দা,  ......সব শব্দই ওর সিলেবাসের বাইরে!

"তা তুমি কোথায় থাকো?"

ছেলে : "আমি এখানের থেকে না ..আমি হল্যান্ড থেকে এসেছি ।

ভদ্রলোক মিষ্টি হেসে গিন্নিকে বললেন "শুনছো ও এখানের থেকে না , হল্যান্ড থেকে এসেছে ।
তা এখন কি ছুটি? এখানে কার বাড়ি এসেছো ? পিসির বাড়ি নাকি মামার বাড়ি?"

(গিন্নির ফোকাস ফিশ কাটলেট এই....)

ছেলে: "ঠাম্মার বাড়ি"

উনি : বাহ্ তাহলে তো দারুন আদর এখন। ...

ছেলে : "হ্যাঁ "
[আবার আমার দিকে তাকালো, একটু ভ্যাবাচ্যাকা মুখ, অচেনা কেউ যে কাউকে এতো প্রশ্ন করতে পারে রোলের দোকানের সামনে, সেটা ওর ধারণার বাইরে ]

কথোপকথন হয়তো বা আরো খানিক চলতো ....

" দিদি, দুইখান এগ রোল রেডি"...আওয়াজ দিলো এগ রোলের দোকানি।

" এই যে শুনছো , আমার খাওয়া শেষ, চলো "  ....আওয়াজ দিলেন গিন্নি ।
ভদ্রলোক আমার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে তারপর গিন্নির মাথায় ছাতা ধরে হাঁটা দিলেন।

মনে মনে হাসলাম । সত্যি অভ্যেস চলে গেছে এতো কথা শোনার।
এমনি কথোপকথন এখনো কেবল কলকাতাতেই হয় মনে হয়।একটা অন্য ধরণের আন্তরিকতা, নো ডাউট! ..
মজা লাগছিলো । ছেলের অবাক মুখটা দেখে আরো মজা লাগছিলো। রাস্তায় ওকে পুরো ব্যাপারটা যতটা পারলাম বোঝালাম।
সবই অভ্যেস!

................to be contd.