Tuesday 5 January 2016

রোগ-ভোগ বয়স-টয়স

ফিরলাম দেশ থেকে। কিছু টুকটাক observation ।

১ : রোগ-ভোগ বয়স-টয়স 
দেশে লোকজন বড্ড তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যায়। 
৪০শেই  নিজেকে ভাবে 'বয়স্ক', ৫০শে 'জীবন তো কাটিয়েই  দিলাম', ৬০এ 'retired, অতএব বেঁচে কি লাভ', ৭০এ  'দিন গোনা শুরু', ৮০ তে  'কি যে পাপ করেছি, এখনো বেঁচে ' ইত্যাদি ইত্যাদি ।....
কেন?
হয়ত কিছুটা আবহাওয়া, কিছুটা ১২০ কোটি জনতার চাপ, কিছুটা চোর জোচ্চোর নেতাদের অত্যাচার, কিছুটা বাতাসে অতিরিক্ত দূষণ, কিছুটা তেল ঝাল মশলা খাওয়া দাওয়া, কিছুটা বেয়াম-কসরত করতে কুঁড়েমি, কিছুটা NDTVতে Barkha-র চিত্কার আর কিছুটা বাজারে পেয়াঁজের দাম  .... 
উপরোক্ত কোনটি তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাবার সঠিক root cause, তা অবশ্য বলা মুশকিল!। হয়ত সব কটাই। 
তবে বয়সের বেশ কিছুটাই মানুষের মনে! বয়স হয়ে গেছে "ভেবেই" আমরা অনেক কিছু আর করিনা। আর করিনা বলে আরো বেশি বুড়িয়ে যাই। তার ফলে আরোই কিছু করিনা।
Chicken and Egg situation, আর কি!

এর ওপর আবার আছে রোগ ভোগ এবং রোগ ভোগ সংক্রান্ত আলোচনা!
৩০ থেকেই গ্যাসের ব্যথা, ৪০শে হয় প্রেসার নয় হাঁটু টনটন, ৫০শে জমিয়ে cholesterol কিম্বা সুগার, ৬০এ হার্ট লিভার কিডনি ডাউন, ৭০এ দু চারটে বাইপাস, ৮০তে .... নাহ থাক!
আমি বলছিনা যে রোগ হবে না। হবে হবে। মাথা থাকলেই মাথা ব্যথা হবে!
কিন্তু আমার কথা হলো যে সেইটা নিয়ে সারাক্ষণ আলোচনা করলে তো রোগটা সেরে যাবে না। অন্য গল্প করলে তো রোগটা অল্পক্ষণের জন্য হলেও ভুলে থাকা যাবে। তাই নয় কি?
এবার দেশে একটা get-together এ সব মামা মাসিদের কাকা পিসি জেঠুদের সাথে দেখা হলো। দারুন মজা!
সবাইকে জিগ্গেস করলাম  "কেমন আছো ?"
একই প্রশ্নের অনেক রকম উত্তর পেলাম  !
"এই চলছে!"
"উনি যেমন রেখেছেন!"
"আর ভালো মন্দ!"
"ভালো নেই !"
"খুব পেট নিয়ে ভুগছি!"
"আর এই ভাবেই কাটবে বাকি দিনগুলো!"
ইত্যাদি  .....
এক দুখান "ভালো আছি" উত্তর পেলাম.......
সবাই যে দূর দূর থেকে এসে একসাথে জড়ো হতে পেরেছো, এটাই কি ভালো থাকার যথেষ্ট প্রমান নয়?
আমার ধারণা, নিজের মুখে "ভালো আছি" বলে সেইটা নিজের কানে শুনলে মন ভালো হয়, confidence বাড়ে ! 

যে কোনো আড্ডার বড় টপিক হলো রোগ। এবং শুধু গল্প নয়, পুরো বিবরণ দিয়ে গল্প। যে কোনো রোগের শুরু থেকে শেষ। কে ডাক্তার, কতদুরে তার ক্লিনিক, কটার সময় আসতে বললেন ইত্যাদি থেকে শুরু করে কি ওষুধ, দিনে কবার, কেমন খেতে। কেমন হাঁটুর ব্যথা - চিনচিন নাকি টনটন? কোমর ব্যথাটা - কনকন নাকি কামড়ানো? ব্লাড সুগার ২০০ নাকি ৪৭৫? চোখের অপারেশান- এক চোখে নাকি দুইঅমুকের ছোটকাকার যেটা হয়েছিল নাকি তমুকের মামাতো দিদির মতন? laser নাকি laproscopy?  থাইরয়েড এ ৫০mg নাকি ৭৫? কাঁচা টমেটো খাওয়া বারণ নয়? motion দিনে একবার নাকি বারংবার? 
রোগের গল্প করতে দেখলাম সবাই খুব ভালবাসে। শুধু নিজের না, এমনকি "শুনেছ কল্পনার খুড়তুতো ননদের পিসতুতো বোনের কি বড় অপারেসন হয়েছে?"..এই অবধিও চলে আলোচনা। আরে বাবা, এত দূর সম্পর্কের রোগের গল্প জেনে কার কি লাভ বল দেখি?
এই আড্ডার মধ্যে যার রোগ নেই তার আবার আরেক যন্ত্রণা । একেবারে কিছুই না বলতে পারার ব্যাপক টেনসন। কেমন জানি অন্য আড্ডাবাজরা ভালো চোখে দেখেন না। কি যে বলবেন বুঝে উঠতে পারেন না। বেশ চিন্তিত মুখ । মারাত্মক peer pressure! ওনার টার্ন এলে উনি অনেক ভেবে বলেন 'কদিন ধরে খুব গ্যাসের ব্যথা'। অন্য আড্ডাবাজের যেন একটু হতাশ হন।
"এমনকি" blood sugar ও নেই??? গ্যাস আবার একটা রোগ হলো? কোনো গ্লামার নেই.....দুটো Zantac খাও আর ভুলে যাও....

লক্ষ্য করলাম এত রোগ ভোগ আলোচনা করতে করতে দেশের প্রত্যেকটা মানুষ নিজের অজান্তেই MBBS করে ফেলেছে। রোগের নাম মুখ থেকে বেরোতে না বেরোতে ওষুধের নামের লিস্ট তৈরি । এই-Mycin, তাই-mycin, অমুক-sil, তশুক-gil ....গড়গড় করে বলে দেবে নাম। antibiotic পর্যন্ত prescribe করে দিচ্ছে! আমি হাঁ করে শুনছিলাম। কি বড় বড় কঠিন কঠিন ওষুধের নাম কেমন অনায়াসে মনে রেখেছে সবাই। এত সুন্দর স্মৃতিশক্তি অথচ বাজার থেকে কলা আনতে ভুলে গেলে বলে কিনা "বয়স হয়েছে, কিছুই মনে থাকে না "!
সাথে ঘরোয়া টোটকার ও কিন্তু কমতি নেই!! আরে বাবা ওষুধটা দোকান থেকে আনতে আনতে যদি অন্য কিছু দিয়ে রোগটা সারিয়ে ফেলা যায়, তাই বা মন্দ কি?
এক চামচ মধুতে দু চামচ ঘি মিশিয়ে, কিম্বা চারটে লবঙ্গর সাথে আদা ফুটিয়ে, গেঁদাল পাতার রসের সাথে কাচকলার খোসা বেটে কিম্বা খালি পেটে এক পায়ে দাঁড়িয়ে   .......সর্দি কাশি থেকে শুরু করে গ্যাস, পেট কনকন, হাঁটু টনটন..সব কিছুর ওষুধ আছে সবার কাছে!

আসলে দেশে আমাদের Hobby -র বড়ই অভাব। তাই সমস্ত আলোচনা ঘুরে ফিরে হয় মোদী কিম্বা রোগ ভোগ কিম্বা কাজের মাসিতে এসে থেমে যায়!

সবাইকে অনেক বুঝিয়ে এলাম । কেউ ফোন এ কেমন আছো জিগ্গেস করলে বলবে "এই তো বেশ ভালো আছি"। গতকাল কি কষ্ট হয়েছে তার গল্প বলতে গিয়ে পুরো experienceটা  আবার নতুন করে মনে করবার কোনো প্রয়োজন আছে কি? বরং নিজের মুখে "ভালো আছি" বলে সেইটা নিজের কানে শুনলে মন ভালো হবে, confidence ও বাড়বে! কি জানি, ঠিক বললাম কিনা!
চিয়ার্স!!













PS: টুকটাক observation ২ আসছে : বাঙালির মোবাইল ফোন ব্যবহার !!