Wednesday 6 September 2017

Chill, chill...just chill.....



[Scene]:  মা দুগ্গা প্যাকিং করছেন মর্তে আসার জন্য ।
ঘরদোর ছত্রাকার । বাবা বিশ্বনাথ এক এক করে সুটকেস নামিয়ে দিচ্ছেন আলমারির মাথা থেকে।


মা: আর তো বেশি দিন নেই মর্তে যাবার।যে যার নিজের সুটকেস প্যাক করে ফেলো, ওখানে গিয়ে এটা পাচ্ছিনা, ওটা পাচ্ছিনা যেন শুনতে না পাই।

বাবা: গিন্নি, যাচ্ছো তো বাপের বাড়ি, একটু chill !

মা: সেই, আমি chill করলে হয়েছে আর কি! তুমি তো বলেই খালাস।তোমার তো chill ই chill । সংসারের সব দায়িত্ব তো আমার  .....

বাবা: আহা মাথা গরম করো কেন গিন্নি। লাল কাঞ্জিভরামটা অবশ্যই নিও সুটকেসে...ওটা পড়লে তোমাকে দারুন লাগে!স্পেশালি আরতির প্রদীপের আলো যখন তোমার মুখে  .....

মা: থাক, বেশি কথা বোলো না। কি তোমার এমন কাজ কৈলাশে যে ৪ দিন ছুটি পাবে না? এমনিতেই তেলের দাম কমে যাওয়াতে সব প্রজেক্ট বন্ধ!

বাবা : আহা, অন্যান্ন প্রজেক্ট তো সব চলছে! দেখছো না সমস্ত জগৎ এখন renewable এনার্জি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। কোনো দেশ সূর্যের আলো চাইছে তো কোনো দেশ বেশি হাওয়া- এতো সব মাথায় রেখে আমার ছুটি পাওয়া একেবারে অসম্ভব! শুধু আমার না, ইন্দ্র, বরুন, পবন --সবার ছুটি ক্যানসেল হয়ে গেছে ।

মা: কি জানি বাপু, এমন ভাবখানা করো যেন আমার কোনো কাজ-ই নেই। যা ছিল তা তো ছিলই, এখন আবার ডিফেন্স মিনিস্ট্রি ও এসে পড়লো আমার ঘাড়ে। যাগ্গে এই বাপের বাড়ি যাবার মুখে আর এইসব ঝগড়া ভালো লাগে না।
..এই লক্ষী সরস্বতী কার্তিক গণেশ ......কই গেলি সব?

ছেলেমেয়েরা: [সমস্বরে] : যাই মা.......

লক্ষী :  মা আমি কিন্তু এবার আমার ভাঁড় ছাড়া কোথাও যাবো না। একেই গতবারের সব ৫০০ টাকার নোট গুলো জলে গেলো। তুমি ওখানে কিছু কিনতে দিলে না আর ফিরে এসে ব্যাস, demonetisation! আমি আর রিস্ক নেবো না এবার, ওখানে যা প্রণামী পাবো সব খরচা করে ফিরব। শুনছি এবার পুজোর বাজারে লিনেন শাড়ি খুব চলছে!


মা: আহা বাছা, রাগিস কেন? সুন্দর গোলাপি রঙের ২০০০ টাকার নোট বেরিয়েছে তো! 

লক্ষী: কিছু বিশ্বাস নেই, রাতারাতি উধাও হয়ে যেতে পারে!
একমাত্র খুচরো পয়সা সেফ । তবে পয়সা যেন কেমন খোলাম কুচি হয়ে গেছে।কোনো ভ্যালু নেই !আমার ভাঁড় দেখলে লোকজন হাসে! এক বাড়িতে গত বিস্সুতে দক্ষিণার থালায় ঠঙ করে আওয়াজ হওয়াতে পুরুত মশাই না দেখেই রেগে বললেন, 'ওই দক্ষিনা লক্ষীর ভাঁড়ে ঢেলে দাও".....

সরস্বতী: আর আমিও বলে দিলাম, আমি বই খাতা পেন নিয়ে যাবো সঙ্গে। গতবার ভাইদের পাল্লায় পরে ipad নিয়ে চলে গেছিলাম!! কি কেলেঙ্কারি। অর্ধেক প্যান্ডেলে wi-fi নেই । যেখানে আছে সেখানে ভাইরাস এর ছড়াছড়ি! 

মা: আহা বাছা, রাগিস কেন? এই সব যন্ত্র তো মানুষ বানিয়েছে নিজেদের সুবিধের জন্য।

সরস্বতী: সুবিধে? সুবিধে করতে গিয়ে সব হাতের লেখার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো? আর বানানের কথা নাই বা বললাম! tweet করতে শিখে যেন মাথা কিনে নিয়েছে! Could কে cud, the কে d, great কে gr8, এমনকি একটা দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে Covfefe?? কোনো মানে হয়? আমার মাথা গরম হয়ে যায় এইসব দেখলে!

কার্তিক: আমার ও experience তেমন ভালো না। সবার হাতে ওই একটা যন্ত্র হয়েছে। এতো করে বাবরি চুল সেট করে গেলাম! সবাই নিজের selfie তুলতে এমন ব্যস্ত, কেউ তাকিয়ে পর্যন্ত দেখলোনা! উল্টে parlour-এর টাকাটা আমার একেবারে waste! আমি ভাবছি এবার যাবোই না।

মা: আহা বাছা, ধৈর্য ধর।

গণেশ: এবার আমিও রিস্ক নেবো না। সাথে নেবো Himalaya ঘি এর শিশি।এখন মর্তের লোকেরা এতো বেশি ডায়েট নিয়ে ভাবছে যে লাড্ডুগুলোর কোনোই স্বাদ নেই...স্বাদ থাকবে কি করে? না আছে চিনি, না আছে ঘি ! এদিকে কিলো কিলো extra cheese দিয়ে Domino pizza খাচ্ছে! কি বিস্বাদ, আমার ইঁদুর পর্যন্ত মুখে তুললো না! তারওপর হয়েছে কি এক নতুন 'জলাঞ্জলি' ব্র্যান্ড -সে তো ঘি নয়, সে হলো গিয়ে..যাগ্গে।মর্তের লোক ভাবছে ওই ঘি খেলে ওইরকম পেট হবে! আরে বাবা সবাইকে তো তুমি শিল্পা শেঠি বানাও নি !!

মা: এতো মহা মুশকিলে পড়া গেলো! আগে মামাবাড়ি যাবো বলে কি উৎসাহ ছিলো, আজকাল সেই উৎসাহে কেমন জানি একটু ভাটা পড়েছে! সত্যি বলতে কি আমার ও গতবার থেকে মনটা একটু খারাপই।সব কিছু কেমন জানি বদলে যাচ্ছে।
কি যে এক বাবা-কালচার শুরু হয়েছে, গুন্ডা চরিত্রহীন লোকজনদের বাবা-বাবা বলে তোরা মাথায় তুলে নাচ্চিস!কেন? কোন জিনিষটা ওর আছে যা তোদের নেই?বানিয়েছি তো আমিই।নিজেদের ওপর বিশ্বাস না রেখে আরেকজনের প্রতি অন্ধ ভক্তি কিসের? ঐটুকু বুদ্ধি তো আমি দিয়েছি বলে মনে হয় ।
তারপর হয়েছে গুচ্ছের বাংলা সিরিয়াল, না আছে কোনো মাথা না আছে কোনো মুন্ডু। শাশুড়ি আর ননদের বিষে ভরা! ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের দিয়েও কি সাংঘাতিক কুটিল চরিত্রের অভিনয়! আর তাই বসে ঘন্টার ঘন্টার দেখছে মর্তের লোকাল দশভূজারা।এদিকে মুখে women empowerment নিয়ে কথা!
আজকাল আমার থেকে আমার প্যান্ডেলের দাম বেশি।এক গাদা টাকা খরচ করে বানাচ্ছে সাবানের প্যান্ডেল, কিংবা দেশলাইকাঠির কিংবা প্লাস্টিকের গ্লাসের ! ওই প্যান্ডেলে আমার দম বন্ধ লাগে !পুজোর প্যান্ডেলের যা বাজেট, তাতে ছোট্ট একটা স্কুল তৈরী হয়ে যায়! একটু ভেবে দেখ, চার দিনের সাবানের প্যান্ডেল নাকি ৩৬৫ দিনের স্কুল? একটু মাথা খাটা বাছারা  .......
কোনোরকমে নমঃ নমঃ করে পুজো সেরে সবাই বেপাত্তা হয়ে যাস। প্যান্ডেল খালি খাঁ খাঁ করে! কারণ তখন প্যান্ডেলের বাইরে মাইক এ সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম এ বাজছে "বেবিকো base পসন্দ আয়া!" খুব বড় আর্টিস্ট, কোথায় যেন প্রাইজ পাওয়া। কোথায় গেলো সেই পুজো সংখ্যার গান কিংবা সেই সানাইয়ের সুর?পাড়ার ছেলেমেয়েরা কোমর বেঁধে ধুনুচি নাচ ও করে না। হাতে ফোন, সর্বক্ষণ!
অষ্টমীর দিনটা বড়  ভালো লাগতো খিচুড়ি ভোগ আর লাবড়া খেতে। তা সেও নাকি আজকাল আর কারুর ভালো লাগে না--বড্ড সেকেলে, বড্ড  একঘেঁয়ে, বড্ড carbs !
সব থেকে খারাপ লাগে তোদের ঝগড়া দেখে! যখন বানিয়েছিলাম তখন একদম সেম টু সেম বানিয়েছিলাম। দুটো চোখ, দুটো কান, একটা নাক, লাল রক্ত, সোনার হৃদয়! এখন তার ওপর তোরা নিজেরা কত বিভেদ যে বানিয়েছিস। সারাক্ষন কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া করে চলেছিস।
খুব কষ্ট হয়, প্রাণ কাঁদে !
এমনি চলতে থাকলে আমার ও বাপের বাড়ি যাওয়া নিয়ে হয়তো ভাবতে হবে!

[শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে]

Knock Knock !

অসুর: মা ঠাকরুন, আসতে পারি?

মা: হ্যা এসো, তুমিও প্যাকিং করে নিও। আর দয়া করে রাস্তায় behave yourself!

অসুর: নানা কি যে বলেন  মা ঠাকরুন। তবে খুব সত্যি কথা বলতে গেলে, খবরের কাগজ তো আমিও পড়ি !মর্তে গিয়ে হয়তো দেখবেন আমিই সব থেকে well behaved ! শুধু শুধু অসুরকুল বদনাম, মর্তে তো গুরু বা বাবারা অসুর থেকে কোনো অংশে কম নন ।
যাগ্গে, যা বলছিলাম। আমার দুইখান কথা আছে। বয়স হচ্ছে, টানা চারদিন ওই ভাবে ত্রিশূল এ নিচে বেঁকে দাঁড়িয়ে থাকা খুব কষ্টকর। পিঠের spondylitis এর ব্যাথাটা বেড়ে যায়, আর মাঝে মাঝে ওই সিংহের চুলগুলো নাকে ঢুকে হাঁচি পায়। একটু নড়লে আবার হাঁস আর পেচাঁ দুদিক থেকে খোঁচা মারে, ওই যে "কাদায় পড়লে হাতি etc ", আর কি। আজ্ঞে তাই বলছিলাম যদি অনুমতি দেন তবে ওই কলাবৌ-এর পাশে একটু জায়গা খালি থাকে, গিয়ে দুদণ্ড বসতে পারি ।
এছাড়া, এবার খুব ইচ্ছে একটা bellbot pant পড়ার। অনুমতি হলে একটা কিনে আনি। সেদিন Sholay দেখছিলাম, উফফ কি ব্যাপক লাগছিলো ওই মর্তের অমিতাভ বচ্চন কে! জানি  Pink হিট, তেমনি Piku ও হিট, তবে Sholay -র ধারে কাছে আসেনা! আপনারা তো থিম পুজোয় নানা সাজে সাজেন, আমার সেই এক রঙিন সিল্কের খাটো ধুতি বড্ড একঘেঁয়ে হয়ে গেছে! শুনছি পুরোনো স্টাইল আবার ফিরে আসছে, তাই বলছিলাম যদি একটা bellbot  .....আর হ্যাঁ, বলছিলাম যে  ..ইয়ে মানে  ..বলছিলাম আমার ও একটা স্মার্ট ফোন চাই! ডাকিনীর সাথে whatsapp করতে চাই। ....

মা: আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, বেশি বকবক করো না। রেডি হও। মোষটাকে একটু ভালো করে চান করিও ।
কলা বৌ, ও কলা বৌ, এক কাপ চা খাওয়াও দেখি। পাকিং করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেলাম .....
সব তো আমাকেই সামলাতে হবে। ওনার তো আর টিকিটি দেখা যাবে না । সুটকেস নামিয়ে দিয়েই হাপিস ..

[মা দুগ্গা গজ গজ গজ গজ করতে করতে খাটে বসে পড়লেন]