Friday 25 May 2018

জাপান কাহিনী ৫:"বড্ড বেশি" সেফ!

pc: youtube.com
জাপানের কিছু গল্প আগেও লিখেছি ।
জাপান কাহিনী ৪.
সত্যি বলতে কি, ওখানে থাকাকালীন লেখালেখির  আরেকটু সময় এবং ঝোঁক থাকলে এতদিনে বই লিখে ফেলতে পারতাম।
তখন নানা চাপে [ধরে নেওয়া যাক, মেনলি পড়াশোনা😄], ঠিক সময় করে গুছিয়ে লিখিনি কিছু। এখন মাঝে মাঝে গল্প করতে গিয়ে, স্মৃতির ফাঁক ফোকরে আটকে থাকা কিছু ঘটনা বেরিয়ে আসে.....

স্কলারশিপের পয়সা বেশ ভালো ছিলো। তবে খরচের হাত ও বেশ ভালো ছিলো । তাই ঠিক গুছিয়ে ভবিষতের কথা ভেবে কিছু কেনা হয়ে উঠতো না । এমনি ব্যালান্সড(??) আয়-ব্যায় নিয়ে ভালোই চলছিল ।কিন্তু এক (সত্যি শুভাকাঙ্ক্ষী ) দাদার উপদেশ এলো। ..
' উল্টো পাল্টা এতো খরচ না করে একটা ল্যাপটপ কিনলে পারিস তো ! তোরই কাজে দেবে !'
[সত্যি,বয়স এবং অভিজ্ঞতা দারুন জিনিস, পারফেক্ট উপদেশ। আরে নানা দাদা, তোমাকে বুড়ো বলিনি  😄]
কথাটা মনে ধরলো।
কিছুদিন পয়সা জমিয়ে, শুভ মুহূর্ত দেখে কিনে ফেললাম একটা ল্যাপটপ।
TOSHIBA ! (yess !!!)

বলা বাহুল্য, আজ থেকে ২০ বছর আগে, নিজের পয়সায় একটা ল্যাপটপ কেনার আনন্দ কিন্তু একেবারে অন্যরকম ছিল , আকাশ ছোঁয়া!

তার দুটো কারণ:
১. কোনোদিন ভাবিনি student অবস্থায় নিজের পয়সায় একটা জলজ্যান্ত কম্পিউটার কিনতে পারবো ।
২. জাপান যাবার আগে কম্পিউটার নামক জিনিসটাতে কোনোদিন হাতই  দিই  নি, নিজের হাতে পাওয়া তো দূরের কথা ।
[মনে পড়ে, বেনারসে যখন M.Sc করছি, তখন আমার ইউনিভার্সিটি প্রফেসর একটা কম্পিউটার কিনেছিলেন। আমাদের ১০ জন student কে শীততাপনিয়ন্ত্রিত ঘরে রাখা বাক্সটার দিকে দেখিয়ে বলেছিলেন, "ওই যে কম্পিউটার, সাবধান, জুতো খুলে রুমে ঢুকবে, হাত দেবেনা "] 

.......তাই সব মিলিয়ে একটা দারুন অনুভূতি! গর্ব, আনন্দ, shock ....সব মিলে মিশে একাকার।

ল্যাপটপ এর ব্যাগ হয়ে উঠলো আমার দিবারাত্রের সঙ্গী । মেশিনটা সারাক্ষন আমার কাঁধে কিংবা হাতে কিংবা টেবিলে,...সব সময় চোখের সামনে, পারলে ছুঁয়ে থাকা ।অনেকটা ছোটবেলায় পুজোর সময় নতুন Bata-র জুতোর  মতন, বালিশের পাশে রেখে শুতেও  গেছি ।
মনে পড়ে ? ঠিক সেমনি।

যাচ্ছিলাম Kobe থেকে Hiroshima দুদিনের ছুটিতে । পিঠে জামাকাপড়ের ব্যাগ, হাতে ল্যাপটপ এর ব্যাগ । স্টেশনে বসে কফি কাপ হাতে লোকজন দেখছিলাম, ট্রেনের অপেক্ষায় ।
ঘড়ি ধরে ৭:৫৭ এ  ট্রেন এসে দাঁড়ালো । জাপানের হাই স্পিড ট্রেন shinkansen । দেখেই আমি
মুগ্ধ ।যেন রূপকথা। ঝকঝক করছে । অটোমেটিক দরজা খুলে গেলো। ২ মিনিট স্টপ ।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতন উঠে গেলাম ট্রেনে , totally hypnotized ।
[হিন্দি সিনেমায় গ্রাম থেকে বোম্বে শহরে এসে Govinda-র  যেমন মুখটা হয়  ঠিক তেমনি মুখের ভাব ]
গুছিয়ে বসলাম, ট্রেন ছেড়ে দিলো।

Excitement-এর লেভেলটা  বুঝিয়ে বলা মুশকিল। দুর্গাপুরের মতন ছোট শহরে এ বড়  হওয়া নিতান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি, জাপানের shinkansen এ বসে, হাতে নিজের কেনা ল্যাপটপ ব্যাগ ঝুলিয়ে Hiroshima বেড়াতে যাচ্ছি   ...ব্যাপারটাই কেমন জানি স্বপ্নের মতন।
সে যাগ্গে, গাড়ি ছুটলো হিরোশিমার দিকে।
জানলার বাইরে হু হা করে মাঠ গাছ  বাড়ি ঘর ছুটে চললো। আমি Shinkansen এর স্পিডে মোহিত হয়ে তাই দেখতে লাগলাম ।

হঠাৎ......
আমার ল্যাপটপ ব্যাগ ?
পাশে রাখা শুধু জামাকাপড়ের ব্যাগ ....
এদিক ওদিক তাকালাম । ব্যাপারটা বিশ্বাসই হচ্ছে না, ওটা তো সারাক্ষন আমার কাঁধে থাকে !
মাথার ওপরের শেলফ এ দেখলাম।
পায়ের কাছে, সিটের নিচে।
....কোথাও নেই!
বাবা মা সাথে নেই যে বকা খাবার ভয়!
কিন্তু দুঃখে চোখে জল এসে গেলো । বহু কষ্টে জমানো টাকা দিয়ে কেনা বড্ড প্রিয় একটা জিনিস নিজের গাফিলতিতে হারালাম। চোখ দিয়ে তখন ঝরঝর করে জল ।
সামনের জাপানি মহিলা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন সব ঠিক আছে কিনা ।
কি একটা উত্তর দিলাম মনে নেই...
উনি ওনার পাশের ভদ্রলোকের সাথে জাপানিতে কিছু কথা বলে তারপর আমাকে বললেন, তুমি পরের স্টেশন Himeji তে নেমে যাও , উল্টো দিকের গাড়ি ধরে Kobe  ফিরে যাও , পেয়ে যাবে ।

তখন রাগে দুঃখে মাথায় আগুন জ্বলছে। .."পেয়ে যাবে" শুনে সেই আগুনে যেন ঘি পড়লো।

নেহাত জাপানিটা তখনও পাল্টা জাপানিতে উত্তর দেবার মতন রপ্ত হয়নি, তাই চুপ ছিলাম ।
তবে মনে মনে ওনাকে বাংলায় বললাম  ......
"  ইসসসসস পেয়ে যাবে! তাই কখনো পাওয়া যায়? ৩০ মিনিট Shinkansen  এ চেপে Himeji , নেমে আবার টিকিট কেটে উল্টো দিকের প্লাটফর্ম থেকে Kobe -র গাড়ি।.সব মিলিয়ে দেড় ঘন্টা মিনিমাম !! স্টেশন এ ফেলে আসা ল্যাপটপ পেয়ে যাবো? বললেই হলো? যা খুশি সান্তনা দিলেই হলো? যত্ত সব "

Himeji তে নামলাম ।
টিকিট  কেটে পরের ট্রেনে Kobe । Shinkansen আর নয়, 'পাতি' লোকাল ট্রেন । সারাক্ষন যেখানে যত ঠাকুর এর নাম জানি তাদের ডাকতে ডাকতে চললাম।  দুচারখানা মানসিক ও করেছিলাম হয়তো , মনে নেই!
পেয়ে গেলে ওই দেবো, পেয়ে গেলে তাই করবো। একেবারে মরিয়া!
ধিকধিক করে লোকাল ট্রেন Kobe পৌঁছলো এক শতাব্দী পরে ।
নেমেই চোখ গেলো উল্টো দিকের প্লাটফর্ম এ ।
ঠিক যেই সিটে বসে কফি খাচ্ছিলাম তার ওপর রাখা আমার ল্যাপটপ ব্যাগ।
এক চুল নড়ে নি!
ঠিক দেখছি তো?

"দিলওয়ালে দুলহানিয়া"র  লাস্ট সিনের  শারুখ-কাজল স্টাইলে ছুটে গেলাম। .....
চোখে জল,জড়িয়ে ধরলাম আমার ল্যাপটপ ব্যাগকে। 

ট্রেনের ভদ্রমহিলাকে মনে মনে "সরি" বললাম , সত্যি উনি জানতেন ওনার দেশ "বড্ড সেফ"!
তাই বলেছিলেন "পেয়ে যাবে"।

[এই রে আবার একটা গল্প মনে পড়ছে।....;-) ]

Wednesday 16 May 2018

ভিন্ন স্বাদের ভ্যাকেশন


খুব একটা প্ল্যানিং না করে বেরিয়ে পড়লাম !
কর্তা অফিসের কাজে টুরে| তার মধ্যে দুদিন স্কুল অফিস ছুটি, উইক এন্ড নিয়ে চার দিন!
১৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে চার দিন বাড়িতে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না!  এমনিতে সারা সপ্তাহ কাজের পর ছুটিতে বাড়িতে বসে থাকতে হয়তো ভালোই লাগে তবে এক্ষেত্রে সমস্যা দুইখান।
এক হলো, বাড়িতে থাকলে সংসারের কাজের কোনো শেষ নেই। ওয়াশিংমেশিন আর ডিশওয়াসার  যেন সারাদিন হাতছানি দিয়ে ডাকে । ঘরের কোনে কোথাও ধুলো, কোথাও ঝুল উঁকি মারে, শান্তি মনে বসতে দেয় না ।
দুই হলো এই যে তেরো বছরের ছেলেটি, ছুটি থাকলে তার হাত থেকে ওই সর্বনাশী মেশিনটা নামানো মুশকিল।  হয় ফোন, নয় ipad !!
উপরোক্ত দুই সমস্যার হাত থেকে খানিক মুক্তি পাবার আশায় দুইজন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম Groningen শহর এর পথে ।
ওখানে এক বান্ধবী অনেকদিন  ধরেই বলছিলো আসতে, হয়ে উঠছিলো না। 
সুযোগ হলো ।

অফিসে অনেকে শুনে বললো, দূর দূর ওখানে কিস্সু নেই । তারওপর  যখন শুনলো যে ১৩ বছরের ছেলে আর আমি যাচ্ছি, একজন বললো, একটু রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না ব্যাপারটা? ওখানে ১৩ বছরের ভালো লাগার তেমন কিছু নেই। ছেলে বোর হয়ে যাবে একেবারে!
কেউ কেউ মুচকি হেসে বললো, "ভালোয় ভালোয় ঘুরে এসো ", কোথায় যেন সেই মুচকির মধ্যে একটু সাবধানবাণী !

যাগ্গে, ছেলেকে প্রস্তাবটা দিলাম ! তখন অবশ্য সব বুকিং হয়ে গেছে , তাই ঠিক প্রস্তাব নয় ।
এক মুহূর্ত নিস্তব্ধতা । জিজ্ঞেস করলো, "ওখানে গিয়ে কি করবো?"
যাচ্ছলে !এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক তৈরী ছিলোনা।

...মানে .....ওই টুরিস্টদের মতন ঘুরে ঘুরে শহরটা দেখবো!
[মা তখন যা মাথায় এলো বলে দিলো]

"কি আছে দেখার? আমি কিন্তু কোনো মিউজিয়াম যাবো না। আমি বেশি হাঁটবো না কিন্তু বলে দিলাম "

....আরে নানা, আমরা দুজন রিলাক্স করবো খালি। একটু বেরোবো, একটু হোটেলে থাকবো , একটু খাবো , ছবি তুলবো। ..ব্যাস!
[মা তখন আপ্রাণ চেষ্টা করছে মাথা ঠান্ডা রাখার]

"হোটেল এ নিশ্চয় wi-fi  আছে?'

...সে তো আছেই, সাথে সুইমিং পুল ও আছে।
[মা তখন প্লানটা ভালো লাগানোর জন্য মরিয়া]


"তাহলে কিন্তু হোটেল থেকে কোথাও বেরোবো না"

মা মাথা নাড়লো ।এক গাল হেসে মেনে নিলো ছেলে।
[মা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো , মনে মনে বললো, আগে তো চলো, তাপর দেখছি !!]

মা ছেলের এমনি ভ্যাকেশন  এই প্রথম ! 
খুব  হৈ  হৈ করে আমরা প্যাকিং করে ফেললাম। রাস্তায় খাবার জন্য ব্যাগে  চিপস, চকোলেট আর কিছু ফ্র্রুট জুস্ ।জামা কাপড় , সুইমিং কস্টিউম, গল্পের বই, ipad , বিভিন্ন রকমের চার্জার ইত্যাদি নিয়ে রওনা হলাম।
সত্যি কিন্তু একটা ভিন্ন স্বাদের  ভ্যাকেশন !

"মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মা কে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে ........."


ট্রেনে বেশ খানিকটা রাস্তা, প্রায় আড়াই ঘন্টা। দুর্ভাগ্যবশতঃ  লাস্ট এক ঘন্টা আবার রেল লাইনে কাজ হচ্ছে বলে ট্রেন বন্ধ , তাই ট্রেন থেকে নেমে বাসের ব্যবস্থা। মজাই লাগলো, একটু যেন রোমাঞ্চকর । ছেলে অবশ্য মুখ গুঁজে তার হাতের মেশিন নিয়ে ব্যস্ত। মা মাঝে মাঝে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গল্প করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো। কখনো বা পুরো একটা গোটা বাক্য উত্তর কখনোবা কেবল হুঁ দিয়ে কাজ সাড়া উত্তর! মা তাতেই খুশি!
পিকনিকের মতন ব্যাগ খুলে মাঝে মাঝে চিপস বার করে খাওয়াতে অবশ্য ভুলছিলো না ছেলে ।

প্রথম হোঁচট খেলাম হোটেলের রিসেপশনে । হোটেলের মেন্ বিল্ডিং এ সুইমিং পুল আছে তবে সিটি সেন্টার এর এই ব্রাঞ্চ এ পুল নেই । আমার তো মাথায় হাত । ছেলে নিশ্চয় খুব দুঃখ পাবে, এই ভেবে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ছেলে মন দিয়ে wifi পাসওয়ার্ড নিচ্ছে । বেশি ঘাঁটালাম না । একটু দুঃখ পেলো ঠিকই তবে তেমন কিছু বড় আঘাত বলে মনে হলোনা । 
মালপত্র রেখে বন্ধুর সাথে তার বাড়ি গিয়ে সারা সন্ধে জমিয়ে আড্ডা মারলাম । Physics থেকে Philosophy --কিছুই বাদ গেলোনা। তারপর মন মাতানো রকমারি রান্না দিয়ে পেট পুজো সারলাম ।


পরের দিন আসল ভ্যাকেশন ফিলিং । সকাল সকাল হোটেল এ জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম শহর দেখতে । খুব সুন্দর সাজানো সিটি সেন্টার । ছোট ছোট দোকান, সুন্দর চার্চ , পাশে ক্যানাল , তাতে নৌকো, ...ছবির মতন । দিশাহীন ভাবে হেঁটে বেড়াতে খুব ভালো লাগলো। ১৩ বছরের ছেলের অবশ্য একটু ঘুরে পা টনটন শুরু হয়ে গেলো। শান্তি বজায় রাখতে উঠে পড়লাম নৌকায়, সাথে লাঞ্চ এ পিজা খাওয়াবার প্রতিশ্রুতি। রোদ ঝলমল দিন, ফুরফুরে হাওয়া , হাতে ক্যামেরা  ....দারুন রিলাক্স একটা ভাব। পাশে তাকিয়ে দেখলাম ছোট কর্তার মুখ চোখ ভীষণ ব্যাজার --এমন ভাবখানা যেন নৌকো ভ্রমণের মতন বিরক্তিকর কাজ আর দুটো হয়না ।
চোখাচোখি হতে বললো, "বোর হচ্ছি"..
এই জেনারেশন আবার খুব সহজেই বোর হয়ে যায়!!
একটু কথোপকথনের শুরু করার ইচ্ছে নিয়ে বললাম , 'দ্যাখ দ্যাখ ওই ব্রিজটা কি সুন্দর"...
উত্তর এলো,  "exactly same ব্রিজ একটা Den Haag এও আছে"
দমে যাবার পাত্রী আমি নই। ..
বললাম, "same নয়. তবে হয়তো similar "
চালাক ছেলে, দেখলো মা এর এই মুড বজায় রাখার জন্য চুপ থাকাই  ভালো।....
;-)
নৌকো বিহার সেরে খুঁজে পেতে ঢুকলাম গিয়ে এক ইতালীয় রেস্তোরাঁয়। ....দুজনের পেটেই তখন ছুঁচোদের কীর্তন শুরু হয়েছে । ফুটবল ফিল্ডের মতন সাইজের পিজা এসে গেলো। খুশিমনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম দুজনে । পেটে  খাদ্য ঢুকলো, আমাদের গল্প ও শুরু হলো । নানা রকমের টপিক। লাইফ আর বোরিং রইলো না, খাদ্য রসিকরা জমিয়ে খেলো। বন্ধুর মতন শেয়ার হলো অনেক গল্প ।


এরপর আরো কিছুক্ষন ঘুরে বেড়াবার ইন্ধন পেটে নিয়ে আমরা আবার হাঁটলাম।



"মা এই মিউজিয়াম তা দেখতে চাই"
ঠিক শুনছি তো? কি বললে?
"মিউজিয়াম তা মনে হয় ইন্টারেস্টিং হবে, লেখা আছে "Welcome Modern Man "..

পুত্রের এহেন অনুরোধ এ যারপরনাই খুশি হয়ে মাতৃজননী তৎক্ষণাৎ টিকিট কেটে ভেতরে।....
এক্ষেত্রে ভেতরে ঢুকে অবশ্য মাতৃজননী একটু নিরাশ হলেন। ওই মডার্ন আর্ট ব্যাপারটা আবার আমি ঠিক ভালো বুঝিনা । এখনো পাহাড় নদী সূর্য ফুল , এইসব দেখতেই ভালো লাগে ।যীশুখ্রিষ্টর পেটের ভেতর থেকে একটা কঙ্কালের হাত বেরিয়ে আছে,  কিংবা জলপ্রপাতের সামনে একটি মৎসকন্যা  একটা কাঁটা গাছ কোলে নিয়ে বসে আছে....এই ধরণের আর্ট আমার মাথা কিংবা হৃদয় কেউই বোঝে না ! 
ফলে ব্যাজার মুখে বেরিয়ে এলাম।
নাহ , এবার একটা কফি খেতেই হচ্ছে। ..

ক্যানালের ধারে বসে লোকজন দেখতে দেখতে কফি খেলাম। বিকেলে আবার বান্ধবীর সাথে আড্ডা আর Thai রেস্তোরায় খাওয়াদাওয়া।
Total chill !!!

শনিবার বাড়ি ফেরার পালা।..
ট্রেনে উঠে বললাম, "বেশ কাটলো, তাই না? তোমার কি ভালো লাগলো সব থেকে বেশি?"

"Groningen এ বেস্ট লাগলো. .....হোটেলের wi -fi টা !! দারুন strong ছিল!"

বোঝো ঠেলা!  সত্যি "ভিন্ন স্বাদের ভ্যাকেশন ".......................
;-)


Saturday 5 May 2018

M&M:মিটিং ও ম্যানেজার!


Dilbert ভায়া কি আর এমনি এমনি পপুলার?
;-)



টিম মিটিং এ বোঝাই দেখি আমার ক্যালেন্ডার,
জীবনখানা বিষিয়ে দিলে, মিটিং ও ম্যানেজার!

চলবে মিটিং এক ঘন্টা, কুঁচকে কপাল ভুরু,
চশমা এঁটে, ব্যাজার মুখে, মিটিং হলো  শুরু !

মুখের ভূগোল এমন কঠিন, লক্ষী মায়ের প্যাঁচা,
রামগরুড়ের মাসতুতো ভাই, এমনি ব্যাটা খেঁচা!

এদিকে ওদিক তাকিয়ে ভাবি, এ কি শুধুই আমি?
কাজের নামে কেবল মিটিং, রাজ্যের ভণ্ডামি?

দিবারাত্র মিটিং মিটিং, করবো কখন কাজ?
পান থেকে চুন খসলে পরে মাথায় তেনার বাজ!

ভালো করে চেয়ে দেখি, সবার একই দশা,
কফির কাপে মুখ লুকিয়ে , চুপটি করে বসা!

মাথা নিচু, কেউ বা দেখি ঢুলছে আপন মনে,
চশমা চোখে বিজ্ঞ ভাবে বসে ঘরের কোনে !

কেউবা দেখি শিল্পী মানুষ আঁকছে পাহাড় নদী,
এইভাবেই খানিক সময় কাটানো যায় যদি !

কেউ খেলছে নিজের সাথেই খাতায় কাটাকুটি,
কেউ আঁকছে বস বাবাজির মাথায় রঙিন ঝুঁটি!

আলপনাতে কেউবা ভরায় বসে মিটিং খাতা,
কেউবা নোটস নিতেই থাকে, পাতার পর পাতা !

হঠাৎ দেখি কেউবা যেন উঠলো নড়ে জেগে,
নিজের কাজের ঢাক পেটালো, প্রবল ঝড়ের বেগে!

কেউবা তাতে করলো চ্যালেঞ্জ, চড়িয়ে উঁচু গলা,
দশটা কথা বললো বেকার, যা দু-শব্দে যায় বলা!

মিষ্টি হেসে বসের মাথায় ঢাললো বা কেউ তেল,
পিঠচাপড়ে, ল্যাংড়া বলে দিলো বেচে বেল!

কেউ তাকায় ঘড়ির দিকে সেকেন্ডে দশ বার,
করলে এমন ঘড়ির কাঁটা ছুটবে আশা তার!

কেউবা বসে লিখছে ছড়া , গেলই ভারী বয়ে,
ছন্দ যখন আসে, সে কি আসে বলে কয়ে?

মুখে চোখে তবু সবার ভাবখানা রাশভারী,
সমস্যা World  Hunger, যেন হচ্ছে মিটিং তারই !

যতই করি ছন্দ ছড়া, মিটিং নিয়ে মজা,
মাসের শুরু মাইনে হাতে, এক্কেবারে রাজা!,

বরং কুঁচকে ভুরু মনোযোগের করি অভিনয়,
পেটের দায়ে জোরসে বলি, M & M এর জয়!




cartooncourtsey: focusadventure.in