Monday 24 August 2020

লক লকে লকডাউন

সবজিটা কোনোদিনই তেমন ভালো লাগতোনা। তোমাদের তো আগেই বলেছিলাম।

কুমড়ো পুজো : বাংলায় যাকে বলে Halloween 

কিন্তু সেই কুমড়োই যে লকডাউনের বাজারে আমার জীবনের এত বড় অংশ জুড়ে বসবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। 
Covid-19 শিখিয়ে দিলো , লাইফ মে কুছভি হো সকতা হ্যায়   .......

সত্যি বলতে কি আজকাল সবজিটা খেতে ভালোই লাগে (নিন্দুকেরা বলবে বয়স হয়েছে, আমি কান দেবোনা)। 
মায়ের হাতের নানা রকম রোজকার রান্না নতুন করে শিখে বানাতে ইচ্ছে করে । ছোটবেলায় অবশ্য নাক সিঁটকেছি প্রচুর, আবার  "বড় বড় চোখের' ভয়ে চুপচাপ গিলেও নিয়েছি । Appreciate করেছি অনেক পরে। .
সে যাগ্গে, গপ্পোয় ফেরা যাক  ....

লক ডাউনের শুরুর দিকে একদিন বাড়িতে কুমড়ো আনা হয়েছিল । কুমড়োটা খেয়ে, কুমড়োর বীজগুলো কোনো কারণে ফেলতে পারিনি (নির্ঘাত Halloween-দেবী ভর করেছিলেন)।  জানলার ধারে বেশ কিছুদিন শুকোনোর পর, একদিন অবহেলায় ওদের পুঁতে দিয়েছিলাম বাগানের এক কোণে। 
Without any expectation .....

কয়েকদিনের মধ্যেই সুন্দর কয়েকটা পাতা এবং এখন লকলকে কুমড়ো গাছ। যাকে বলে লকডাউনে লকলকে  😀
.....and Life has completely changed after that ;-)



ঘুম থেকে উঠে প্রথমে তার দর্শন। 
তারপর দিনের মধ্যে কিছুটা সময় তার যত্ন করা, কিছুটা সময় সুন্দর করে তার ছবি তোলা আর বাকিটা সময় ভাবা কি বানিয়ে খাবো. ....
কুমড়ো পাতায় চিংড়ি পাতুড়ি , নাকি কুমড়ো ফুল ভাজা, নাকি কচি ডগা পোস্ত  নাকি অপেক্ষা করবো কুমড়োর?
Dilemmas of life.......



কুমড়োর ডগা বাড়ছে নেদারল্যান্ডস এর মাটিতে আর ইন্ডিয়াতে বসে চারজন সিনিয়র সিটিজেন তাই নিয়ে খুবই উত্তেজিত! 
প্রত্যহ কুমড়ো গাছের growth chart Whatsapp এ চেপে চলে যাচ্ছে জামশেদপুর এবং কলকাতায় । 
"Breaking News: আজকের বিশেষ বিশেষ খবর হলো কুমড়ো গাছের ডগায় আরেকটি পাতা বেরিয়েছে এবং ৩ নম্বর  ফুলটিতে একটি মৌমাছি বসতে দেখা গেছে।"
আমার তো মনে হয় যতক্ষণ না রোজ ছবিটা পৌঁছয়, আমার বাবা জলস্পর্শ করেন না !!
কখনো বা উত্তেজিত "বাহ্", কিংবা "যদি খাস তাহলে ডগাগুলো ঠিক এক হাত কাটবি, not more" কিংবা "মায়ের থেকে জেনে নে চচ্চড়িতে কি দেয়" কিংবা "নাঃ, ভেবে দেখলাম তোকে একটা মাচা বানাতেই. হবে" ইত্যাদি ইত্যাদি । 
আমার মায়ের ফোকাস কিন্তু কুমড়ো গাছের বিভিন্ন অংশের সম্পূর্ণ ব্যবহারের দিকে । ফুল, পাতা, ডাঁটা ..কিছু যেন বাদ  না যায় ।এই তো আজ পোস্ত আর কচি ডাঁটা পাতা দিয়ে একটা রেসিপি দিয়েছেন । মেয়ে রান্না করে ছবি পাঠালে তবে কিনা নিশ্চিন্তি ...

কলকাতা থেকে শাশুড়িও ভিডিও কল করে কুমড়ো গাছটিকে বার কয়েক নিরীক্ষণ করেছেন। চিন্তা একটাই। কুমড়ো অবধি যেন ব্যাপারটা গড়ায় । আজকে ফোনে মাচা বানাবার একটা অভিনব উপায় বললেন আমাকে (কি জানি কাল রাতে ঘুমিয়েছিলেন কিনা!)। 
"কাচা জামাকাপড় মেলার স্ট্যান্ডটাকে বরং মাচা বানিয়ে ফেল, সুন্দর কুমড়ো হবে"
স্বশুর মশাই অল্প কথার মানুষ। প্রথম প্রশ্নে আমাদের কুশল জেনেই পরের প্রশ্ন, "ওটা কি মিষ্টি কুমড়োর গাছ?"

আমার বাবা এককালে খুব বাগান করতেন। ছোটবেলায় দেখেছি বাগানে আলু, মটরশুঁটি আর দারুন গোলাপ হতো।
নেদারল্যান্ডস এ বেড়াতে এসেও বাবা আমাদের বাগানে টমেটো এবং পালং শাক প্রচুর চাষ করেছিলেন।
আজকাল বাবার সাথে প্রাত্যহিক টেলিফোন কলের প্রথম টপিক ভাইরাসের গুষ্টির তুষ্টি । তার পরের টপিকই হলো বাগান আর বাগানে কুমড়ো গাছ ।

আজকে প্রাত্যহিক আলোচনায় যাকে বলে উত্তেজনার চরম । 
"শোন কুমড়ো হলে, তার বীজগুলো ফেলবিনা। শুকিয়ে, তারপর অল্প ফুটিয়ে সেই জলটা খেলে Cholesterol কমবে। আজকেই  টিভিতে দেখাচ্ছিল "

'গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল' শুনেছিলাম । 
লক ডাউনের বাজারে দেখছি 'গাছে কুমড়ো, হৃদয় Cholesterol-free '
😀

মায়ের রেসিপি : ডাঁটা পাতা পোস্ত ভাপা  
গরম জলে ভালো করে কুমড়ো পাতা ধুয়ে নিলাম। তারপর ফুটন্ত গরম জলে খানিক্ষন ভিজিয়ে রাখলাম।
তারপর ডাঁটা পাতাগুলো  খানিক কুচিয়ে নিলাম ।
এবার একটা বাটিতে ডাঁটা পাতা, এক চামচ সর্ষের তেল, বাটা পোস্ত এবং স্বাদ মতন নুন মেখে নিলাম।
একটা বড় বাসনে জল গরম করে তার মধ্যে এই মাখা সমেত বাটি (ঢাকনা সমেত) বসিয়ে দিলাম। ২০-২৫ মিনিট মতন ভাপিয়ে, নামিয়ে ৩-৪ চামচ সর্ষের তেল ওপর থেকে আর গোটা দুয়েক লঙ্কা ।
গরম সাদা ভাতে পরিবেশন।............
অতি সুস্বাদু  ...এবার পরের রেসিপির অপেক্ষা ।
কুমড়োর আগা খাবো, ডগাও খাবো. ......






 

2 comments: