Saturday 12 November 2022

শাশুড়ি-বৌমা ছড়া-সংবাদ

আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা । এখন ভাবলে মনে হয় আগের জন্মের গল্প। 
ঠিক যেন একটা স্বপ্ন । তারপর হঠাৎ করে যেন ঘুম ভেঙে যাবার অনুভূতি। 
সে যাগ্গে, ঘুম যখন ভেঙেছে, তখন চোখ খুলে আবার বাস্তবে ফিরতে তো হবেই। 
বাস্তব স্বপ্ন নয় ঠিকই, তবে বাস্তব ও সুন্দর 😊, এগিয়ে চলার উপায়  .....
চরৈবেতি, চরৈবেতি, চরৈবেতি ..

তখন জাপানে থাকতাম। বিয়ে করলাম এক ভারতীয় ওলন্দাজকে  (সেই গল্প বলবো আরেকদিন)।
বিয়ের পরেও এক বছর জাপানে থাকতে হয়েছিল পিএইচডি শেষ করার জন্য। অবশ্যই ঝুড়ি ঝুড়ি মন খারাপ হতো সেইসময় ।কর্তা ফোন বিল সামলাতো, আর আমি লিখতে ভালোবাসতাম চিঠি ।
জানতে পারলাম শাশুড়িমা ছড়া লেখেন । আমি ও হিজিবিজি লিখতে ভালোবাসতাম । 

শুরু হলো শাশুড়ি বৌমা ছড়ায় চিঠি।

আজ এক মেঘলা দুপুর  - পুরোনো একটা বাক্স - কিছু হাতে লেখা সুন্দর চিঠি - কিছু মনের কথা - কিছু সুন্দর অনুভূতি খুঁজে পেলাম । 
স্মৃতির হাত ধরে পৌঁছে গেলাম অনেক গুলো বছর আগের সময়ে। .....




শাশুড়ির মনের কথা
(কিন্তু লিখেছে বৌমা, জাপান ২০.৩.২০০০)

কোলে করে, পিঠে করে, বুকের কাছে আগলে ধরে ,
তিলে তিলে বড় হলো আমার গোবর্ধন,
তার কপালে জুটলো কেন, শাঁকচুন্নি ভূতনি হেন,
আহা, বাছার একি নির্যাতন ।
প্যান্ট পরে, শার্ট পরে, ভুলেও পরেনা শাড়ি,
একটা কাজ করতে বলো, মুখ করবে হাঁড়ি। ...
সিনেমা দেখার নামে এক পায়ে হয় খাড়া,
লাল টুকটুকে রং মেখে ঠোঁটে বেরিয়ে বেড়ায় পাড়া ।
কোথায় বসে শান্ত হয়ে শিখবে সাধের রান্না,
উল কাঁটায় গাঁথবে কাঁথা করবে ঘরকন্না। 
হায় রে গাবু, কি হবে তোর আমি যদি চোখ বুজি,
এই জন্যই বলেছিলাম আমি পাত্রী খুঁজি  ....
তা সইলো না তোর তর ,
হায় রে বাছা, কি করে তুই 
এরে নিয়ে করবি এখন ঘর?
[শাড়ির আঁচল এ চোখ মুছতে মুছতে ]

বৌমার মনের ইচ্ছে 
(লিখেছে বৌমা, জাপান ২০.৩.২০০০)

সবার থেকে অনেক দূরে লিখছি আমি বসে,
লেখাপড়ার নাইকো শেষ, মরছি অঙ্ক কষে ।
থাকলে কাছে ঠিক দুপুরে, দিতেম সেজে পান,
রাতের বেলা গানটি গেয়ে, ভরিয়ে দিতেম কান ।
পায়ে দিতেম মালিশ করে বুদ্ধুহুতুম তেল,
মাথার কাছে হাত পাখাটি, চলতো without fail ।
বিকেলবেলা নিজের হাতে বেঁধে দিতেম কেশ 
আদা দিয়ে চা বানাতাম, লাগতো তোমার বেশ ।
কুটনো কেটে বাটনা বেটে , এগিয়ে দিতেম হাতে,
রুই মাছের মুড়োখানি , দিতেম তোমার পাতে ।
সবার কাছে বলতে তুমি, বৌমা বড় ভালো,
সেবার কোনো নাইকো ত্রুটি  ঘর করেছে আলো ।

গাবুর মায়ের উত্তর 
(লিখেছে শাশুড়ি , কলকাতা ২৫.৪.২০০০)

মিছেই কেন দিচ্ছ দোষ গোবর্ধনের মাকে 
কোনো নালিশ নেই তার, মানে ভাগ্যটাকে ।
ইচ্ছে ছিল পাত্রী খুঁজে, বৌ আনবো ঘরে ,
সারলো গাবু সেই কাজটি, খুবই বুদ্ধি করে ।
ইন্টারনেটে পছন্দ করা , এলো গাবলী রানী ,
বড় ছোট সবার মাঝে, সবেধন নীলমনি !
নাইবা দিলো সিঁথির সিঁদুর , অঙ্গেতে নেই শাড়ি 
শার্ট প্যান্ট আর বব চুলেতেই আলো শশুরবাড়ি ।
রান্নাবান্না ঘরকন্নায়  নাইবা দিলো মন,
টিভি আর সিনেমাতে মগ্ন সারাক্ষন,
লিপস্টিকেতে রাঙিয়ে ঠোঁট, হাই হিলটি পায়ে,
এমন সাধের বৌ ছেড়ে গাবু একলা হায় ।
রূপের যে নাই তুলনা, গুনের নেই শেষ,
দেখে শুনে বলে সবাই, বাহ বেশ বেশ ।
গাবু আর গাবলী রানীর, জুড়ি মেলা ভার 
দুইজনেতে গড়বে মিলে, সুখের সংসার ।।


💕
..........খুব সুন্দর ছিল সময়টা ।



No comments:

Post a Comment