I am a global citizen, no doubt.
কিন্তু আমি ঘটি।😀
শুধু তাই নয়, আমি হার্ড -কোর বাঁকড়ি। অর্থাৎ মুড়ি এবং পোস্ত আমার রক্তে আছে । সামনে বিরিয়ানি আর পোস্ত রেখে বাছাই করতে বললে, আমি চোখ বুজে পোস্তর দিকে হাত বাড়াবো।
গরম ভাত. পোস্ত বাটা, সর্ষের তেল, নুন, কাঁচা লঙ্কা! ব্যাস. .......
চোখ বুজে Nirvana !
তা এহেন গ্লোবাল বাঁকড়ির জীবনে মুড়ি ফিরে এলো লকডাউনের বাজারে।With a bang!
মুড়ির প্রত্যাবর্তন !
মুড়ি যে আমার বরাবর অত্যন্ত প্রিয় ছিল ঠিক তা নয় । বরং ছোটবেলায় বিকেলের জলখাবারে মা মুড়ি দিলে বেশির ভাগ সময় মুখ বিকৃত করেছি। তারপর চুপচাপ খেয়েও নিয়েছি ।
(ও বাবা, ওই চোখ তো দেখোনি, এখনো ভাবলে গা শিউরে ওঠে ভয়ে)
😁
তবে ট্রেনের ঝালমুড়িটা অবশ্য বরাবরই প্রিয়।ট্রেনে উঠে থেকে মনটা উশখুশ করতো কখন উঠবে ঝালমুড়ি।
মেখে, ঝাঁকিয়ে, ঠোঙায় দিয়ে ওই যে লাস্ট এ একটা নারকোল গেঁথে দিতো!! ....আহা, অমৃত!
যাগ্গে যা বলছিলাম, এই লকডাউনের বাজারে শুরু হলো অনলাইন শপিং ।
অনলাইন ইন্ডিয়ান দোকান থেকে অন্যান্য জিনিসের সাথে আনানো হোল এক প্যাকেট মুড়ি । হল্যান্ডে আজ বহু বছর মুড়ি কেনা হয়নি।কখনই বা খাবো? অফিস থেকে ফিরেই ডিনার খেয়ে নেবার অভ্যেস হয়ে গেছিলো বহুদিন ।
গত সপ্তাহে একদিন দুপুরের দিকে মিটিংয়ের ফাঁকে পেটে গুড়গুড় করে আওয়াজ হলো । খিদে । মনে পড়লো আরে. বাড়িতে তো মুড়ি আছে।
কর্তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মুড়ি খাবে?
বেশ রাজসিক স্টাইলে বললো, খেতে পারি তবে আলু সেদ্ধ দিয়ে মাখলে ভালো হয়....
(মানে খেয়ে, মুড়িকে এবং আমাকে ধন্য করা)
খুব যত্ন করে মাখলাম। পেয়াঁজ, লঙ্কা, শশা, আলু সেদ্ধ, চানাচুর, সর্ষের তেল ।
তৃপ্তির সাথে খেলাম দুজনেই।
ওমা, পরের দিন শুনি কর্তা ফোনে মা কে বলছে, "মুড়িটা আমার তেমন ভালো লাগেনা, চিবোতে চিবোতে মাথা ধরে যায়। ..."
পরের দিন তিনটে নাগাদ আবার খিদে।..আমি সেদিন মুড়ি মাখলাম বাদাম দিয়ে।
আবার জিজ্ঞেস করলাম, মুড়ি মাখছি , খাবি?
বললো ,"দে........ , খাই"
এক বাটি ভ্যানিশ ! মাথা ধরার কোনো চিহ্ন তো দেখলাম না.......
পরের দিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ।এবার মুড়িতে ছিল ছোলা আর পেয়াঁজ।
আবার ভ্যানিশ।
আজকের ঘটনা কিন্তু একটু অন্যরকম । আজকে বাড়িতে না আছে চানাচুর, না আছে বাদাম , না আছে ছোলা।
আজকে প্রকাশ পেলো আসল বাঁকড়ির বাঁকড়িত্ব । হলো রক্তের পরীক্ষা !
[Flashback ]
মনে পড়ে গেলো বাঁকুড়ার গ্রামের বাড়ি । আমরা সবাই মিলে হৈহৈ করে যেতাম দোলের সময় ।
সকালে ব্রেকফাস্ট এ মুড়ি। তবে বাদাম ছোলা দিয়ে ঝালমুড়ি বানিয়ে নয়।
বড় পাত্রে মুড়ি আর সাথে দোলের মেলা থেকে এনে গরম গরম আলুর চপ।
এবার আসি খাওয়ার কায়দায়।
প্রথম দু এক কামড় চপে । একটু চিবিয়ে তারপর মুঠো করে মুড়ি অল্প দূরত্ব থেকে মুখের মধ্যে ছুঁড়ে দেওয়া ।
এমনি ভাবে কিছুটা খেয়ে যখন বাটিতে একটা চপ বেঁচে তখন চপটাকে মুড়ির সাথে মেখে ফেলা। মুড়ি পুরো হলুদ, অল্প ভেজা ভেজা, ঠিক যেন তরকারি দিয়ে মাখা। অনেকে আবার সামান্য জল দিতেন তাতে । একটা সোঁসোঁ করে আওয়াজ হতো.....মুড়ি জল টানছে।
তারপর সেটা জমিয়ে খাওয়া।উফ কি দারুন স্মৃতি!
সেই আলুর চপ একবার বেশ কয়েকটা খেয়ে যা কান্ড হয়েছিল।..গ্রামে তখন টয়লেট ছিল না। সে আরেক গল্প, বলবো আরেকদিন । আজকে মুড়িতে ফোকাস।
আজকে আমার ফ্রিজে ছিল ফুলকপির তরকারি ।
কর্তাকে বললাম , মুড়ি মাখার আজ কিছু নেই , আমি তরকারি দিয়ে খাবো। খাবি?
অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "তরকারি দিয়ে? নাহ ! "
হার্ড-কোর বাঁকড়ি তৃপ্তির সাথে এক বাটি মুড়ি মেখে খেলো তরকারি দিয়ে। ..
Nostalgia can be so sweet!
বাটিতে ভরে মশলা মুড়ি,
পাকলে খায় ফোকলা বুড়ি !
মুড়িতে কটা বাদাম ভাজা,
গুনতে বলেন পাগলা রাজা ।
মন্ত্রীমশাই যদিও কুঁড়ে,
ছাঁচি পেয়াঁজ আনেন খুঁড়ে।
সেনাপতির মুখে ঢাল,
মুড়িতে নাকি বড্ড ঝাল,
এমন সময় দমকা হাওয়া,
উড়লো মুড়ি, ভন্ড খাওয়া!